মুস্তাফিজুর হমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি থাকলেও মৌলভিত্তির দৌড়ে সময়ই বহুজাতিক কোম্পানির আধিপত্য লক্ষ করা যায়। কারণ এসব কোম্পানি থেকে তুলনামূলকভাবে অধিক রিটার্ন পেয়ে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বর্তমানে পোর্টফোলিতে পরিবর্তন এনেছেন বিনিয়োগকারীরা। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি তারা ঝুঁকেছেন মুনাফার দৌড়ে এগিয়ে থাকা দেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে। সম্প্রতি এমন ১০টি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে ডিএসই থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সমান তালে প্রতিযোগিতা করছে বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে। ফলে বছর শেষে তারাও ভালো মুনাফার মুখ দেখছে। সেই সঙ্গে শেয়ারপ্রতি আয় ও শেয়ারপ্রতি সম্পদও সন্তোষজনক। আর এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো লভ্যাংশও দিতে পারছে। এসব কারণে কিছুসংখ্যক দেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বিনিয়োগকারীরা।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানের ভালো ইপিএস থাকা মৌলভিত্তির একটা অন্যতম শর্ত। বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানিতে থাকলে তারা ভালো রিটার্ন পাওয়ার আশা করতে পারেন। আমি মনে করি, হুজুগে বা গুজবে কান না দিয়ে নামসর্বস্ব কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করে মৌলভিত্তির কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কম থাকে। বিনিয়োগকারীদের একটি কথা মনে রাখা দরকার, সেটি হচ্ছে যত ভালো কোম্পানি, তত কম ঝুঁকি।’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, মুনাফায় এগিয়ে থাকা দেশি ১০টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্টাইল ক্র্যাফট, এসিআই লিমিটেড, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, আরামিট লিমিটেড, পদ্মা অয়েল, যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, স্কয়ার ফার্মা, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন ও কনফিডেন্স সিমেন্ট।
শীর্ষে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে স্টাইল ক্রাফটের। ৯৫ টাকা ৪২ পয়সা ইপিএস নিয়ে দেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর পরের অবস্থানে রয়েছে এসিআই লিমিটেড। বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ারের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৭৪ টাকা ৪১ পয়সা।
এছাড়া ৪১ টাকা ৭০ পয়সা ইপিএস নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস।
অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বর্তমানে আরামিট লিমিটেডের ইপিএস ১৯ টাকা ৫০ পয়সা।
পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে পদ্মা অয়েল ও যমুনা অয়েল। প্রতিষ্ঠান দুটির ইপিএসই ১৯ টাকা ৭ পয়সা ও ১৭ টাকা ৭৪ পয়সা।
এছাড়া মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ইপিএস ১৭ টাকা ১০ পয়সা, স্কয়ার ফার্মার ১৫ টাকা ৬২ পয়সা, ইউনাইডেট পাওয়ারের ১৫ টাকা ৫৭ পয়সা ও কনফিডেন্স সিমেন্টের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৮০ পয়সা।
উল্লিখিত কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলেন, বরাবরই এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলভিত্তি ভালো। প্রতিষ্ঠানগুলো থাকায় যেমন ঝুঁকি কম, তেমনি এখান থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য তারা এসব কোম্পানিতে থাকতে পছন্দ করেন।
এ প্রসঙ্গে মো. রফিকুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘এসব কোম্পানি থাকার বড় সুবিধা হচ্ছে, এখান থেকে ভালো লভ্যাংশ পাওয়া যায়। ফলে ক্যাপিটাল গেইন নিয়ে তেমন ভাবতে হয় না। আমার মতে ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়।’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সর্বশেষ বছর এসব কোম্পানি থেকে সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ থেকে সর্বনি¤œ ১৯ দশমিক ৫০ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিয়েছে ইউনাইডেট পাওয়ার জেনারেশন ও এসিআই লিমিটেড। কোম্পানি দুটির মধ্যে ইউনাইটেড পাওয়ার ১২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। আর এসিআই লিমিটেড ১১৫ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদান করে। পরের অবস্থানে থাকা মেঘনা পেট্রোলিয়াম শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান করে ১০৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ। এছাড়া ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্ট ও পদ্মা অয়েল নগদ লভ্যাংশ দেয় ১০০ শতাংশ করে। অন্যদিকে স্টাইল ক্র্যাফট নগদ ৭৫ শতাংশ ও আরামিট ৭০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। এছাড়া স্কয়ার ফার্মা ৪০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদান করে। একইভাবে কনফিডেন্স সিমেন্ট ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা এবং যমুনা অয়েল ১৯ টাকা ৫০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে।
Add Comment