মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পতন শেষে পুঁজিবাজারে ফিরতে শুরু করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যে কারণে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতিতেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বাড়তে শুরু করেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ও লেনদেন। তবে সামনে লভ্যাংশ মৌসুম থাকায় জুন ক্লোজিং কোম্পানি ঘিরে লেনদেনে মগ্ন বিনিয়োগকারীরা। এর জের ধরে বাড়ছে এসব কোম্পানির কদর।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে তাদের তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ শেষ করেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানিই আগের চেয়ে মুনাফায় রয়েছে। বছর শেষে এটা বহাল থাকবে বলে মনে করছেন তারা, যে কারণে লভ্যাংশ ঘরে তোলার জন্যই এসব কোম্পানিতে ঝুঁকছেন তারা। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তুলনামূলকভাবে ভালো ইপিএস দেখানো কোম্পানিগুলোতে ঝুঁকেছেন তারা।
বিনিয়োগকারীদের এই প্রত্যাশা পূরণের বিষয়টি পুরোটাই নির্ভর করে কোম্পানির সর্বশেষ হিসাব-নিকাশের ওপর। শেষ প্রান্তিকে এসে যদি হিসাবে গরমিল হয় তবে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন নাও পড়তে পারে মুনাফায়। যদি ধারাবাহিকতা না থাকে, তবে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। কারণ তিন প্রান্তিকে ভালো মুনাফা দেখানোর পর শেষ প্রান্তিকে যদি মুনাফা কমে যায়, কিংবা লোকসান হয়, তবে সেই কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষমতা হারায়।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, যেসব কোম্পানির জুন ক্লোজিং সেইসব কোম্পানির দর বৃদ্ধি খুবই স্বাভাবিক। কারণ সামনেই এসব কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ ঘোষণা আসবে। তাছাড়া বর্তমানে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর খুব কম, অর্থাৎ ক্রয়যোগ্য। এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতও অনেক কম। ফলে হাতেগোনা কিছু কোম্পানি ছাড়া অন্য কোম্পানির শেয়ারদর বাড়া স্বাভাবিক। তবে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই ভালো কোম্পানির সঙ্গে থাকা উচিত, কারণ বাজারে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানির সংখ্যা কম।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, সামনে লভ্যাংশ মৌসুম। অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই লভ্যাংশের মাধ্যমে মুনাফা করতে চান। বিনিয়োগকারীদের এই প্রবণতা সঠিক। তবে এই ক্ষেত্রে কোম্পানি বাছাই করতে হবে ভেবেচিন্তে, কারণ সব কোম্পানি থেকে ভালো লভ্যাংশ আসবে না। তাই বিনিয়োগের আগে দেখা নেওয়া দরকার ওই কোম্পানির আগের লভ্যাংশ প্রদানের হার কেমন। সেইসঙ্গে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার দিকে নজর দিতে হবে।
এদিকে জুন ক্লোজিংয়ের কারণে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম। ডিসেম্বর ক্লোজিং হওয়ার কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারদরও কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কোম্পানির শেয়ারদর কমার আরও কারণ রয়েছে। সর্বশেষ বছরে বহুজাতিক কোম্পানি ছাড়া ডিসেম্বর ক্লোজিং অধিকাংশ কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের সন্তোষজনক লভ্যাংশ প্রদান করতে পারিনি। সেই তুলনায় ভালো লভ্যাংশ প্রদান করেছে জুন ক্লোজিং কোম্পানি।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, ব্যাংক এবং অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এই তালিকায় এগিয়ে রয়েছে ব্যাংক। খাতটিতে মন্দা পরিস্থিতি থাকায় প্রায় সব প্রতিষ্ঠান এর সুযোগ নিচ্ছে। ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার পর মন্দার কথা বলে নামমাত্র লভ্যাংশ প্রদান করে ক্যাটেগরি টিকিয়ে রাখছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা ঝুঁকে পড়েছেন জুন ক্লোজিং কোম্পানিতে।
বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক জুন ক্লোজিং কোম্পানিতে
