Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 9:56 pm

বিনিয়োগকারীদের নজর ছয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে!

 

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ভিত্তি দুর্বল। ভবিষ্যতে এ অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হবেÑএমন কোনো খবরও নেই। এরপরও দিনের পর দিন কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর। মাসের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারদর বেড়েছে ১৮ থেকে ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত। যে কারণে গত এক মাসে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে শোকজ করেছে ডিএসই।

তবে শেয়ারের দাম বৃদ্ধির কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিরা। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছেÑবিডি ওয়েলডিং, আজিজ পাইপস, বিচ হ্যাচারি, রহিমা ফুড, শাইনপুকুর সিরামিক ও সিনোবাংলা।

কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য না থাকার পরও লাগামহীন দর বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই। তাদের অভিমত, ইতোমধ্যে এসব শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত এক মাসের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে তালিকাভুক্ত বিডি ওয়েলডিংয়ের। এ সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর বেড়েছে ৮২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এক মাস আগে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ছিল ১৩ টাকা। সর্বশেষ গতকাল যা লেনদেন হয় ২৩ টাকা ৭০ পয়সায়। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিচ হ্যাচারি। এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ১৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ২২ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। একই সময় শাইনপুকুর সিরামিকের শেয়ারদর বাড়ে ৩৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।

এ সময় আরেক দুর্বল কোম্পানি আজিজ পাইপসের শেয়ারদর বেড়েছে ৩৩ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। এক মাস আগে এ শেয়ারের দর ছিল ৬৪ টাকা ৭০ পয়সা, বর্তমানে যা লেনদেন হচ্ছে ৮৬ টাকা ১০ পয়সায়। অন্যদিকে তালিকায় থাকা খাদ্য খাতের রহিমা ফুডের শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। ১০৬ টাকার শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ১৪১ টাকায়। আর এ সময়ের মধ্যে সিনোবাংলার শেয়ারদর বাড়ছে ১৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। গতকাল এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয় ৪২ টাকা ৮০ পয়সায়। এক মাস আগে যে শেয়ারের দর ছিল ৩৬ টাকা ২০ পয়সা।

অন্যদিকে এসব কোম্পানির শেয়ারদর আরও বাড়বেÑবাজারে এমন গুজব রয়েছে। সরেজমিনে প্রতিনিয়তই এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়ার খবর শোনা যায় বিনিয়োগকারীদের মুখে। আর এদের কথায় কান দিয়ে বুঝে-না বুঝে অন্যরা শেয়ার কিনে নেন। লুৎফর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী একটি কোম্পানির নাম উল্লেখ করে বলেন, শেয়ারটির এখন যে দর রয়েছে, কিছুদিনের মধ্যে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সে কারণে তিনি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন।

এদিকে আর্থিকভাবে দুর্বল এসব শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ইতিবাচক হিসেবে নিতে পারছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, ঊর্ধ্বমুখী এসব শেয়ারের দরে যে কোনো সময় পতন নেমে আসতে পারে। প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার নিয়ে বাজার-খেলোয়াড়রা মেতে রয়েছেনÑএমন আশঙ্কা করেন তারা। সেজন্য বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, যেহেতু আর্থিক অবস্থার বিবেচনায় এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত এসব শেয়ার থেকে দূরে থাকা। কারণ যে কোনো সময় এসব শেয়ারের দরে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। তাদের একটি কথা মনে রাখা দরকার, শেয়ারদর অতিমূল্যায়িত হয়ে যেখানেই যাক না কেন, এক সময় আবার তারা যোগ্য স্থানে ফিরে আসে। তখন সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন।