বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশায় জল ঢেলেছে তিন কোম্পানি

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানি। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে হাক্কানী পাল্প, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ও আরামিট সিমেন্ট। বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দেবে এমন আশায় চড়া দরে এসব কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু ভালো লভ্যাংশ প্রদানের পরিবর্তে ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে কোম্পানি তিনটি। ফলে মুনাফার আশায় যারা এসব শেয়ার কিনেছিলেন, তাদের এখন মাথায় হাত।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, কিছুদিন আগে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ৫২ টাকার শেয়ার দর বেড়ে ১০০ টাকার কাছাকাছি চলে যায় ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকা হাক্কানী পাল্পের। বাজারে গুজব ছিল কোম্পানিটি একটি টিস্যু কারখানা স্থাপন করবে। এর পাশাপাশি ভালো লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরে আসবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে এমন অভিযোগও ওঠে। বিষয়টি নজর এড়ায়নি ডিএসই কর্তৃপক্ষেরও। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ডিএসই। এর জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের কাছে শেয়ারের দর বাড়তে পারে এমন কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই। মূলত এ খবর বাজারে পাওয়ার পর কিছুটা কমতে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর কমতে থাকে।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য তারা শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেবে না। যে কারণে দ্রুতই দর কমতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। বর্তমানে এ শেয়ার ৫০ থেকে ৫১ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে হাক্কানী পাল্পের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মুসা  শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মূলত মুনাফা করতে না পারায়, ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও বিনিয়োগকারীদের নিরাশ করতে হয়েছে।’ কারণ হিসেবে ‘ব্যবসায়িক মন্দা’র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আশা করছি ভবিষ্যতে আমাদের মন্দা কেটে যাবে। তখন নিশ্চয়ই বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো কিছু করতে পারব।’

এদিকে ভালো রিটার্ন পাওয়ার আশায় স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ার কিনতে প্রতিযোগিতা করেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এ বছর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভালো লভ্যাংশ আসছে। এর জের ধরে শেয়ারের দর ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ১১৭ টাকায় চলে আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর উল্টোটা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করেছে, তারা এ বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ। এর পর থেকেই শেয়ারের দর কমতে থাকে। বর্তমানে এ শেয়ার ৮০ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে রাজু আহমেদ নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি ভালো স্টক ডিভিডেন্ড দেবে এমন খবর শুনে শেয়ার কিনেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে আমাদের প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিয়েছে কোম্পানিটি।’ নিজেদের শেয়ার উচ্চদরে বিক্রি করার জন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিজেই ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগে এমন কীর্তিকলাপ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

একই ঘটনা ঘটেছে আরামিট সিমেন্টের বেলায়। ভালো রিটার্নের আশায় দ্রæত বাড়তে থাকে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর। স্বল্প সময়ের মধ্যে দর ৩৪ টাকা থেকে ৪৬ টাকায় চলে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্য দুই প্রতিষ্ঠানের মতো এ প্রতিষ্ঠানটিও বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ার এখন ৩০ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন রিটার্ন দেবে, এটা তাদের ব্যাপার। তাদের কাছে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা থাকবে, এটাও স্বাভাবিক। তবে কোম্পানি ভালো রিটার্ন দেবে এমন গুজবে কান দেওয়া বোকামি। এভাবে শেয়ার বেচাকেনা করা ঠিক নয়।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০