নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ ধসের পর অগ্নিসংযোগের অভিযোগে প্রায় চার বছর আগে ছয় বিনিয়োগকারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। গতকাল রোববার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১৫-এর বিচারপতি ওয়ায়েস করনী খান চৌধুরী ওই মামলা খারিজ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেলেন ছয় বিনিয়োগকারী।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে ভয়াবহ ধসের পর রাস্তায় নেমে আসে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষোভ-আন্দোলন-অনশনের মাধ্যমে টানা দরপতনের প্রতিবাদ জানান বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারিয়ে সে সময়ে আত্মহত্যাও করেন কয়েকজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। টানা দরপতন চলাকালীন আন্দোলনরত বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ এনে ২০১২ সালের ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা (যার নম্বর- ৫২) করে ডিএসই। মামলায়, ডিএসই ভবনে আগুন লাগানোর জন্য ইন্টারনেট লাইনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত শেষে বিনিয়োগকারীদের একটি সংগঠনের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাকসহ আরও চারজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন মতিঝিল থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা। গতকাল শুনানি শেষে ডিএসইর ওই মামলা খারিজ করে দেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১৫।
বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ধসের কারণে কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী লাভবান হলেও পুঁজি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করেছে। কেউ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। কিন্তু ধসের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির মুখোমুখি করা যায়নি। উল্টো বিনিয়োগকারীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। তেমনি একটি মামলার দায় থেকে বিনিয়োগকারীরা অব্যাহতি পেলেন। আরও তিন-চারটি মামলা আছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ছয় ডিসেম্বর থেকে মূলত পুঁজিবাজারে ধস শুরু হয়। মাত্র আট কার্যদিবসেই ডিএসইর সাধারণ সূচক আট হাজার ৯০০ পয়েন্ট থেকে সাত হাজার ৬০০ পয়েন্টে নেমে আসে। পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এক দিনেই সবচেয়ে বেশি সূচক কমে ২০১১ সালের ১০ জানুয়ারি। একদিনেই ডিএসইর সাধারণ সূচক ৬৩৫ পয়েন্ট কমে যায়। সে সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারের দর কমে যায়। এর প্রতিবাদে আন্দোলনরত বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর জের ধরে ডিএসইর সামনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এর জের ধরে নাশকতার অভিযোগ আনা হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে। প্রায় ছয়টি মামলা করা হয়। এ নিয়ে দুটি মামলা থেকে বিনিয়োগকারীদের অব্যাহতি দেওয়া হলো।