বাজার-সংক্রান্ত অনেক আইন রয়েছে। আইন কখনও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে পারে না। বরং সুরক্ষা দিতে পারে আইনের সঠিক প্রয়োগ। অর্থাৎ বাজার-সংক্রান্ত যেসব আইন রয়েছে, সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন হলে বাজারের এ অবস্থা হতো না। নতুন নতুন আইন তৈরি করে বিনিয়োগকারীদের মগজ ধোলাই করা যায়; কিন্তু যতদিন বিদ্যমান আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা না হবে, সেখানে নতুন আইন-কানুন করে কোনো লাভ হবে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টেকনিক্যাল অ্যানালিস্টের অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন এবং এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম।
মুহাম্মদ মহসীন বলেন, ১৪ সপ্তাহ ধরে বাজার পড়ছে। এরকম হওয়ার কোনো যুক্তি নেই। বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও কারসাজির মাধ্যমে এটি করা হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের অনিয়ম ও কারসাজিকারীদের ধরা হলেও তেমন কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না। এতে তারা আরও বেশি সুযোগ পায়। আবার বাজার-সংক্রান্ত অনেক আইন রয়েছে। আইন কখনও সুরক্ষা দিতে পারে না। সুরক্ষা দিতে পারে আইনের সঠিক প্রয়োগ। অর্থাৎ যে আইন রয়েছে, সেটির সঠিক বাস্তবায়ন হলে বাজারে এ অবস্থা হতো না। নতুন নতুন আইন তৈরি করে বিনিয়োগকারীদের মগজ ধোলাই করা যায়; কিন্তু যতদিন পর্যন্ত আগের আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে নাÑসেখানে নতুন আইন দিয়ে কোনো লাভ হবে না।
তিনি আরও বলেন, বাজার খোঁড়ার মতো চলছে। একদিকে বাজার ইকুইটি-নির্ভর, অন্যদিকে বাজারের গভীরতা কম। গভীরতা বলতে শুধু কোম্পানি আনা বা অতিরিক্ত কোম্পানি থাকা নয়। এখানে গভীরতা বলতে বাজারে যে কোনো কোম্পানির যে কোনো শেয়ারদরের ক্ষেত্রে উভয় পাশে অর্থাৎ ক্রেতা ও বিক্রেতার ঘরে পর্যাপ্ত বিনিয়োগকারী থাকতে হবে। এর মানে হচ্ছে, বাজারের গভীরতা রয়েছে। এখানে লেনদেন তখনই বাড়বে যখন বাজারে বিনিয়োগযোগ্য অবস্থা তৈরি হবে। বাজারের গভীরতা কেন বাড়ছে না সেটি গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। সত্যিকারভাবে বাজার ভালো করতে চাইলে সঠিকভাবেই এগোতে হবে।
শফিকুল আলম বলেন, অন্য দেশের পুঁজিবাজারের তুলনায় দেশের পুঁজিবাজারে কিছু কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বিএসইসির কিছু কথার পরিপ্রেক্ষিতে গত দুদিন বাজার একটু ইতিবাচক দেখা গেছে। কিন্তু এটি বাজারের দীর্ঘস্থায়ী কোনো পরিবর্তন নয়। যে পরিবর্তন দেখে বাজার ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হবে, তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। গত ৪০ বছরে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন অনেক এগিয়েছে। এখন অর্থনীতির গ্রোথ আট দশমিক ১৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে অর্থনীতির আকার অনুযায়ী বাজার আরও ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে বাজার টানা ১৪ সপ্তাহ ধরে পড়ছে। ২০১০ সালে বাজারধসেও এরকম অবস্থা তৈরি হয়নি। আবার অন্য দেশে করপোরেট বন্ড বাজারে ট্রেডিং হয়; কিন্তু এ বাজারে করপোরেট বন্ডের কোনো ট্রেডিং হয় না।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ