পুঁজিবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপক। আর অডিটররা বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করে তার ওপর প্রতিবেদন দেন। অডিটরদের প্রতিবেদন হয় দুই পাতার। কিন্তু আমাদের বিনিয়োগকারীরা কখনও অডিটরের প্রতিবেদন পড়েও দেখেন না। তারা তথ্যনির্ভর বা তথ্যসমৃদ্ধ হতে চান না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন, এফসিএ এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু সাইদ আহমেদ, এফসিএ।
মাহমুদ হোসেন বলেন, সবাই তথ্য গরমিলের দোষ অডিটরদের ওপর চাপান। কিন্তু অডিটরদের ভূমিকা কোথায় কোথায় আছে? একটি হচ্ছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার সময় এবং অন্যটি ইস্যুর সময়। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট তৈরি করে ম্যানেজমেন্ট। আর অডিটররা বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করে তার ওপর প্রতিবেদন দেন। অডিটরদের প্রতিবেদন হয় দুই পাতার। এখানে ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টের সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব থাকে ম্যানেজমেন্টের। অডিটরদের দায়িত্ব হচ্ছে ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট নিরীক্ষা করে ঠিক আছে কি না, তা দেখা। এজন্য অডিটররা কখনোই ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টের আকৃতি পরিবর্তন করতে পারেন না। কিন্তু আমাদের বিনিয়োগকারীরা অডিটরের প্রতিবেদন কখনও পড়েন না। তারা তথ্যনির্ভর হতে চান না। বাজার-সংশ্লিষ্ট যে কেউ যখন অডিটরের ব্যাপারে আপত্তি আনেন, তখন আমরা অডিটরকে তলব করি। আমাদের একটি বিশেষ দল আছে, যেটি কারিগরি দিক থেকে অনেক সক্ষম; তারা যাচাই-বাছাই করে যখন দেখেন এ অভিযোগ সত্য, তখন আর্থিক জরিমানা করা হয় ও অডিটরের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়। তাছাড়া ইনকাম ট্যাক্স অফিস থেকে ঢালাওভাবে একটি কথা আসে যে, অডিটররা তিন ধরনের রিপোর্ট তৈরি করেন। ইনকাম ট্যাক্স, ব্যাংকের তহবিল বাড়ানো ও বিনিয়োগকারীদের জন্য। এ তিন ধরনের রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
আবু সাইদ আহমেদ বলেন, আমরা বাজারের উন্নতির কথা চিন্তা করি। স্টেকহোল্ডার বলতে শুধু চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকেই বোঝায় না। তাহলে দায়টি শুধু চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের হবে কেন। বাজারে এখন তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড ৪২টির মতো। হঠাৎ গত বছর এনবিআর যখন সব কোম্পানিকে ৩০ জুনের মধ্যে বছর শেষ করার নির্দেশ দিল, তখন বাজারে ব্যাংক ৩০টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২৩টি, এমএনসি আছে ১৫টির মতো ও কিছু ইন্স্যুরেন্স আছে; সব মিলিয়ে ১০০টির মতো বাদ দিলে থাকে ২৩০টি। এ ২৩০টি ফান্ডকে কিন্তু ওই ৪২টি ফান্ড দিয়ে অডিট করতে হবে। এনবিআর যেহেতু এ তিন জায়গায় ছাড় দিয়েছে, তাহলে আমাদের বাকি স্টেকহোল্ডারদের একটি ব্যাপারে একমত হওয়া উচিত ছিলÑযারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে, তাদের ইয়ার ক্লোজ হবে ৩০ জুন। কিন্তু এ ব্যাপারটি ঘটেনি। ফলে ঘটনা দাঁড়াছে ৪২ জন অডিটরের ২৩০টি কোম্পানি অডিট করতে হবে। আর আইন অনুযায়ী ১২০ দিনের মধ্যে সেগুলোর অডিট করতে হবে। কাজেই এ জায়গায় অডিটরদের আরও সময় দিতে হবে।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম