বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে আশাহত

দেশের অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক। কিন্তু পুঁজিবাজার সেভাবে এগোচ্ছে না। কারণ এখানে খুব সহজে কারসাজি করা যায়। আর এসব কাজে জড়িত বেশিরভাগই বড় বিনিয়োগকারী। কয়েকটি সিন্ডিকেটের কাছে বাজার জিম্মি। এ জন্য দেখা যায় যখনই বাজার ভালোর দিকে যায়, তখনই স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বাজার স্থিতিশীল থাকতে পারছে না। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অনেক আশা নিয়ে বিনিয়োগ করে আশাহত হচ্ছেন। ফলে তারা ধীরে ধীরে বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন, এফসিএ এবং জাতীয় কর আইনজীবী ফেডারশনের সভাপতি ড. মো. নূরুল আজহার।
মাহমুদ হোসেন বলেন, নির্বাচনের পর জানুয়ারির কয়েকদিন পুঁজিবাজার দ্রুত বেড়েছিল। কিন্তু আবার দ্রুত শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে। কথা হচ্ছে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে এবং মন্ত্রিপরিষদে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক টেকসই উন্নয়নে নিতে হলে জনগণের বিনিয়োগে অংশগ্রহণ করা দরকার এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সবাই ইতিবাচকভাবে দেখছেন। আবার গত মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বাজার সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলেছেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রীও বাজার সম্পর্কে ইতিবাচক এবং সামষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ। বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করেছেন পুঁজিবাজার মুষ্টিমেয় কয়েকটি সিন্ডিকেটের হাত থেকে বেরিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে। দুঃখজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত সেটি হয়নি। বরং কয়েকটি সিন্ডিকেটের কাছে বাজার জিম্মি। এ জন্য দেখা যায় যখনই বাজার ভালোর দিকে যায়, তখনই কয়েকটি স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বাজার স্থিতিশীল পর্যায়ে ফিরতে পারছে না। বিনিয়োগকারীরা অনেক আশা নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে আশাহত। আবার মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আবার বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। যেমন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো।
মো. নূরুল আজহার বলেন, আইসিবি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পুঁজিবাজারের স্বার্থে। অর্থাৎ যখন বাজার নি¤œগতিতে থাকবে তখন আইসিবি একটি ভারসাম্যে তৈরি করবে। কিন্তু দেখা যায় উল্টো আইসিবি শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। আসলে আইসিবি সেভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। এখানে এক ধরনের কারসাজি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার দায় এড়াতে পারে না। আবার আইপিওর মাধ্যমে যেসব কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয় তার বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি। এসব কোম্পানি দুই থেকে তিন বছর ভালো লভ্যাংশ দেয়। তখন এসব কোম্পানি শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু পরে সে গতি বজায় রাখতে পারে না। ফলে ওই সব কোম্পানিকে জেড গ্রুপে পাঠানো হয়। আবার অনেক সময় দেখা গেছে, ওই সব কোম্পানি জেড গ্রুপে যাওয়ার পরেও রফতানিকারক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। কিন্তু যেসব বিনিয়োগকারীদের জন্য ওই কোম্পানি গঠিত এবং সম্প্রসারিত হয়েছে তাদের সঠিকভাবে মুনাফা দিচ্ছে না। অথচ ওই সব কোম্পানিকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। আসলে নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ এখন তলানিতে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক। কিন্তু পুঁজিবাজার সেভাবে এগোচ্ছে না। কারণ এখানে খুব সহজে কারসাজি করা যায়। আর এসব কাজে জড়িত বেশিরভাগই বড় বিনিয়োগকারী। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে বাজারবিমুখ হচ্ছে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০