Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 7:19 pm

বিনিয়োগ হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

রমজানের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ করেই পুঁজিবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সাধারণত এ সময় বাজার মন্দা থাকে কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম। সামনে ঈদের ছুটির পর বেশিরভাগ কোম্পানির আর্থিক বছর শেষে লভ্যাংশের ঘোষণা আসবে। তাই এই সময় লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে। এ কারণে অনেকেই বিশেষ করে বড় অঙ্কের বিনিয়োগকারীরা শেয়ার সংগ্রহ করা শুরু করেছেন। যার কারণে বাজার ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া আগামী দিনগুলোয় বাজারকে ইতিবাচক করতে ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। আর মুনাফা করতে চাইলে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে।  গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এসব বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব এবং সিনিয়র বিজনেস জার্নালিস্ট সাইফুল হাসান।

হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, এ বছর বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ভালো বছর গেছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন, গত বছরের তুলনায় ব্যাংক বা লিজিং কোম্পানির শেয়ার ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদে যারা নভেম্বরের আগে কিনেছে তারা কোনোটাতে ১০০, ২০০ এমনকি ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধিতে বিক্রয় করতে পেরেছেন। এ দুটি খাতে ছয় মাস মেয়াদি অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বোনাসসহ ১০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে শেয়ার বিক্রি করেছেন। কাজেই বিনিয়োগ হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি। বিনিয়োগ যদি হয় ৩ বা ৭ দিনের তাহলে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য  কোনো  সুফল বয়ে আনবে না। মার্চ-এপ্রিলের দিকে বাজার যখন ভালো ছিল, তখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো তহবিল বাজার থেকে উত্তোলন করেছে। একটি শেয়ারের দর যখন ১১ টাকা থেকে বেড়ে ২২ বা ৩০ টাকার মতো হয়, তখন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নাও বিক্রি করতে পারেন। কারণ তার মাথায় ঘুরছে ২০১০ সালের দামটি। হয়তো ১০ সালে এ শেয়ারটির দাম ৩০০ টাকা ছিল। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দুই বা তিনগুণ প্রফিটের জন্য এ শেয়ারটি কিনে মুনাফাটি সংগ্রহ করবেনই। আর প্রফিট তুলে নেওয়ার ফলে বাজার বেশ কিছুদিন খারাপ ছিল। এ খারাপ সময়ের মধ্যে ভালো কোম্পানিগুলো কিন্তু আবার তাদের জায়গা নিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া আমরা অনেকেই বলছি, ঈদের পর আবার বাজার ভালো হবে। প্রকৃতপক্ষে এটিই আমাদের বাজারে চলে আসছে। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিষ্ঠান এবং বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার স্টক করেন এবং একটা সময় পর যখন প্রবৃদ্ধি হয় তখন তারা শেয়ার ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, আমরা একটি বিষয় বারবার অনুসরণ করতে ভুল করি তা হচ্ছে, ৫২ সপ্তাহে একটি শেয়ারের যে কম দাম ছিল তার থেকে তিনগুণ বেশি দামে শেয়ার কিনে যদি বলি মুনাফা হচ্ছে না, তাহলে কিছু করার নেই। আর এভাবে পৃথিবীর কোনো শেয়ারবাজারেই মুনাফা করা যায় না। বর্তমানে প্রায় দুই মাস ধরে অধিকাংশ শেয়ারের দাম কম। আমি মনে করি, বাজারে বিনিয়োগের এখনই উত্তম সময়। এছাড়া বিনিয়োগ যদি ৩-৪ মাসের কম সময়ের জন্য করেন, তাহলে তাকে বিনিয়োগ বলা যাবে না। আর বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি থাকবেই এবং পৃথিবীর সব জায়গাতেই তা থাকে।

সাইফুল হাসান বলেন, আমরা সবাই পুঁজিবাজার থেকে প্রফিট নিতে চাই। কিন্তু পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সেভাবে কাজ করতে পারি না। এজন্য ডিএসই, এসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকার বা পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের সমন্বিত সমর্থন দরকার। কিন্তু সেটি আমাদের বাজার সঠিকভাবে পায়নি বলে মনে করি। দেশের অর্থনীতির যে হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সে তুলনায় আমাদের পুঁজিবাজার বাড়েনি। অথচ আমরা জানি যে, একটি দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সে দেশের পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী আমাদের অনেকবারই রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করবেন বলেছিলেন। কিন্তু তারও কোনো প্রতিফলন আমরা আজ পর্যন্ত দেখতে পাইনি। আর ক্যাপিটাল মার্কেটকে গতিশীল করতে হলে অবশ্যই ভালো  কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। কাজেই এ বিষয় আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে বলে মনে করি।

 

শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম