Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:59 pm

বিপাকে ওভেন ব্যাগ উৎপাদনকারীরা

নাজমুল হুসাইন : পাটের সুদিন ম্লান হওয়ার পর দেশে পণ্য মোড়কজাতকরণে বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার শুরু হয়। এরপর বিগত প্রায় দুই দশকে প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরিতে দেশে প্রচুর পিপি ওভেন ব্যাগ ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। যাতে এ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ এখন প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার ওপরে। তবে এখন প্রধান প্রধান ১৭ পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে এ খাত। চরম দুশ্চিন্তায় এ শিল্প-সংশ্লিষ্টরা এখন দিন পার করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে এখন পর্যন্ত প্লাস্টিকের ব্যাগ উৎপাদন করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৫টি। যার মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ প্রতিষ্ঠান দেশের বাজারে ব্যাগ সরবরাহ করে থাকে। বাকিরা এ বাজারের পাশাপাশি রফতানির সঙ্গে জড়িত। এসব প্রতিষ্ঠান বছরে ৩০০ কোটি পিস পিপি ওভেন ব্যাগ উৎপাদনে সক্ষম। যার মধ্যে ২০০ কোটি পিসেরও বেশি ব্যবহার হয় অভ্যন্তরীণ বাজারে। কিন্তু বর্তমানে পাটের ব্যাগ বাধ্যতামূলক হলে এর বাজার অর্ধেকই হারাবে খাতটি।

বাংলাদেশের প্লাস্টিকদ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) তথ্যমতে, দেশে ৭৫টি কারখানার মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি রফতানির সঙ্গে জরিত। সার্বিক এ খাতের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশে পিপি ওভেন ব্যাগ রফতানি হচ্ছে। রফতানির পরিমাণ এখন ৫০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। এ খাতে ৫০ হাজারের বেশি লোক জড়িত।

বিগত ২০ বছরে দেশে এ শিল্প গড়ে উঠেছে। মোড়কের সহজপ্রাপ্যতা ও স্বল্প খরচের কারণে সিমেন্ট, সার, বিভিন্ন খাদ্যশস্য, চাল, আটা, গুঁড়োদুধ, লবণ, চিনিসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও প্রাণিখাদ্য প্লাস্টিকের ব্যাগজাতীয় মোড়ক দিয়ে মোড়কীকরণ করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ এসব পণ্যের মোড়কজাতেই ব্যবহার হয় ২০০ কোটি পিসের অধিক ব্যাগ।

বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল কবির খান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ সেক্টরের ব্যবসায়ীরা এখন দারুণ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। যদিও আগে সরকারই এসব ইন্ডাস্ট্রি তৈরির অনুমোদন দিয়েছে, এখনও দিচ্ছে। কিন্তু সহায়তা না করে উল্টো বিপদে ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশে বাজারকে কেন্দ্র করে যারা ব্যবসা করছে, তারা ইতোমধ্যে বাজার হারাতে শুরু করেছে। আগে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য মোড়কজাতকরণে আমাদের যে প্লাস্টিকের ব্যাগে সরবরাহের কনট্রাক্ট থাকতো, সেসব এখন বাতিল হচ্ছে। এছাড়া আরও পণ্য পাটের মোড়কের বাধ্যতামূলক আইনের আওতায় আসছে। সব মিলে এ খাতটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ অবস্থায় বিকাশমান প্লাস্টিক খাত ও পাট খাতকে প্রতিপক্ষ করা হচ্ছে। যা এখন আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে। পাটব্যাগ বাধ্যতামূলক করতে পরিচালিত আইনি অভিযানে পিপি ওভেন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাদের উৎপাদন ব্যাহত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যারা খেলাপিতে পরিণত হওয়ার শঙ্কায় ভুগছে। নতুন আইন করে এসব সমস্যা সমাধান প্রয়োজন।

জানতে চাইলে বিপিজিএমইএ সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-আমলা পাটকে বাঁচাতে ইমোশনাল ডিসিশন নিচ্ছেন। পাটের ব্যাগের ওপর শতভাগ নির্ভরশীল না হয়ে বরং ‘পাটের ব্যাগ’ এবং ‘পিপি ওভেন ব্যাগ’ উভয়কেই নিজ নিজ বাজার তৈরির স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। তাহলে কোনো শিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এজন্য নতুন আইন করা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের অনুমোদন নিয়ে ২০ বছর থেকে এ শিল্প সচল রয়েছে। হঠাৎ এখন পাটের সঙ্গে এ শিল্পকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে উদ্যোক্তাদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে হেনস্তাও করা হচ্ছে। জেল-জরিমানার হুমকি নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে অনেককে। তবে সরকারের উচিত বাস্তবতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।’

গত জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, আলু, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া এবং তুষ-খুদ-কুড়ার মোড়ক হিসেবে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। আর আগে ২০১৫ সালে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের আইন বাস্তবায়ন শুরু করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সব মিলে এখন ১৭টি পণ্য পাটের ব্যাগ ব্যবহারে বাধ্যতামূলক। যা নিশ্চিত করতে আগামী ১৫ মে সারা দেশে বিশেষ আইনি অভিযানে নামছে সরকার।