Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 4:30 pm

বিপিসির এলপিজি ডিলারের  ৫৪ শতাংশই চট্টগ্রামে 

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : বিপিসির এলপি গ্যাসের উৎপাদন প্রতি বছর কমছে। অন্যদিকে উৎপাদিত এ গ্যাসের সাড়ে ৫৪ শতাংশ ডিলারের অবস্থান চট্টগ্রামে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী এলপি গ্যাসপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যান্য বিভাগের বাসিন্দারা। এ অবস্থায় এলপি গ্যাসের সংকটকে পুঁজি করে অবৈধভাবে অধিক মুনাফা করছে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিপিসির সূত্রমতে, দেশে বর্তমানে এলপি গ্যাসের চাহিদা বছরে প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে ছয় বছর ধরে বিপিসির এলপি গ্যাসের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে কমছে। বর্তমানে বিপিসি সরবরাহ করছে গড়ে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড থেকে অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়া করে পাওয়া যায় ১০ হাজার ২৯৪ মেট্রিক টন। আর সিলেট গ্যাস ফিল্ড থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাতকে (ন্যাচারাল গ্যাস লিক্যুউড-এলএনজি) প্রক্রিয়া করে পাওয়া যায় ছয় হাজার ১১১ মেট্রিক টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা এই গ্যাস বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানি এলপিজি লিমিটেড বোতলজাত করে তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর ডিলারের মাধ্যমে সারা দেশে বাজারজাত করে।

অন্যদিকে বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করে তা বোতলজাত করে বিক্রি করে। বেসরকারিভাবে প্রতিবছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন এলপি গ্যাস বাজারজাত করা হয়। এই গ্যাসের পুরোটাই আমদানি করা। নিজস্ব কেন্দ্রে বিভিন্ন মাপের বোতলে বোতলজাত করে এই গ্যাস বেসরকারিভাবে বাজারজাত করা হয়।

বিপিসির আওতাধীন চার বিপণন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েলে মোট এলপিজি ডিলার আছে তিন হাজার ১৩৬টি। এর মধ্যে পদ্মা অয়েলের ডিলার আছে ৭১৭টি, মেঘনার অয়েলের এক হাজার ২৫৩টি, যমুনা অয়েলের ৭৮৪টি ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েলে ৩৮২টি। আবার বিভাগানুসারে বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশব্যাপী ডিলার নেটওয়ার্কে চট্টগ্রাম বিভাগে ডিলার লাইন্সেস আছে এক হাজার ৭১০টি, যা মোট এলপিজি ডিলারের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর অবশিষ্ট রাজশাহী বিভাগে আছে ৫৫১টি (১৭.৬০%),  খুলনায় আছে ৩৯৬টি (১২.৬০%), বরিশালে আছে ১৬১টি (০৫.১৫%), সিলেটে আছে ১৪৭টি (০৪.৭০%), রংপুরের আছে ৮৫টি (০২.৭০%), ঢাকায় আছে ৮৪টি (০২.০৬%) এবং সবচেয়ে কম মাত্র দু’জন ডিলার আছে ময়মনসিংহে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (বিপণন ও বিতরণ) আবু হানিফ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ডিলারদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একজনের কাছে একাধিক লাইন্সেস আছে। তারা বংশানুক্রমিকভাবে এ ব্যবসা করছে।’

এলপিজি ডিলারশিপ নীতিমালা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা পুরোনো নীতিমালা আছে। কিন্তু এ নীতিমালায় তেমন স্পষ্ট কিছু বলা নেই।’ নীতিমালাটি দেখতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে নীতিমালাটি দেখাতে অনীহা প্রকাশ করেন।

দেশের মোট এলপিজির ডিলার সংখ্যার মধ্যে মেঘনার অয়েলের ডিলারের সংখ্যা এক হাজার ২৫৩টি, যা শতাংশ হিসেবে ৪০ শতাংশ। এ তেল বিতরণ সংস্থার সচিব শহিদুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘যেহেতু আমাদের কাছে ডিলারের আবেদন বেশি ছিল, সেহেতু আমাদের ডিলারের সংখ্যা বেশি থাকাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে অনিয়ম কিছুই হয়নি।’

অন্যদিকে যমুনার ডিজিএম (বিক্রয়) আহমেদ নূর শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ নীতিমালায় তেমন কিছু নেই।’ উভয় কর্মকর্তা নীতিমালা প্রদর্শনে অপারগতা প্রকাশ করেন।এদিকে বর্তমানে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় এমনিতে বিপুল জনগোষ্ঠী জ্বালানি সুবিধার আওতার বাইরে রয়েছে। বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০১১-১২ অর্থবছরের মোট উৎপাদন হয় ২০ হাজার ৭২৯ মেট্রিক টন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট উৎপাদন হয় ১৯ হাজার ৬৭১ মেট্রিক টন। এর পরের বছর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট উৎপাদন হয় ১৭ হাজার ৫২৯ মেট্রিক টন। এর পরের বছর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট উৎপাদন হয় ১৭ হাজার ৪২৪ মেট্রিক টন। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট উৎপাদন হয় ১৬ হাজার ৫০ মেট্রিক টন, যা ২০১১-১২ অর্থবছরের তুলনায় ২১ শতাংশ কম উৎপাদিত হয়েছে। অথচ এ সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল দ্বিগুণ। বিপিসির প্রকাশিত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যে বিক্রয়ের সম্ভাব্য প্রাক্কলন এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ এ তিন অর্থবছরে সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত উৎপাদন করা যাবে।

বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারী বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কম মূল্যে এলপি গ্যাস বিক্রি করে। কম দামে কিনে যে দামে বিক্রি করার কথা তা করছেন না মধ্যস্বত্বভোগী বা ডিলার বা বিক্রেতারা। সারা দেশে এই চিত্র। যেসব এলাকায় পাইপলাইনের গ্যাস নেই, সেসব এলাকায় ছোট প্রকৌশল শিল্প ও আবাসিক মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা এলপিজি, কিন্তু সুষম বণ্টন প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় পাইপলাইনে গ্যাস নেই এমন এলাকায় এলপিজি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত জনগণ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ জ্বালানি সুবিধার বাইরে থাকায় তরল খনিজ গ্যাস (এলপিজি) বা বোতল গ্যাসে সরকার ভর্তুকি প্রদান করে। কিন্তু বোতলজাত গ্যাসের সরকারের দেওয়া ভর্তুকির কিছুই পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। মধ্যস্বত্বভোগীরা ভর্তুকির টাকা নিয়ে নিচ্ছেন। এতে বাজারে অনেক সময় অস্থিরতা দেখা দেয়। এই সুযোগে বেশি দামে এই গ্যাস বিক্রি করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে একদিকে যেমন সরকার কম দামে বিক্রির জন্য রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে গ্রাহকরা তার সুবিধা পাচ্ছে না। বিপিসি জানায়, প্রতি বোতলে প্রায় ৪০০ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। কনডেনসেট থেকে এলপিজি তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় এক হাজার ১০০ টাকা, কিন্তু কারখানা মুখে বিক্রি করা হয় ৬৪০ টাকায়। আর সাধারণ গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করার কথা ৭০০ টাকায়।