আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দাম কম

বিপিসির ফার্নেস অয়েলে ঝুঁকছেন দেশীয় ক্রেতারা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক বাজারে এক লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৬০ টাকা। আর দেশের বাজারে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিক্রি করছে ৫৩ টাকায়। ফার্নেস অয়েলের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় কমাতে বিপিসি থেকে ফার্নেস অয়েল কেনার চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়েও সরকার-নির্ধারিত দর সাত টাকা কম। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের ফার্নেসের দাম কম থাকলে তখন বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মুনাফার জন্য সরাসরি আমদানি করে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মতে, দেশের বিদ্যুৎ খাতের চাহিদানুসারে বিপিসি ফার্নেস অয়েল আমদানি ও পরিশোধন করে। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এক লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদাপত্র দেয়। পরে চলতি মাসের ১ তারিখে আরও এক টন বেশির চাহিদাপত্র দেয়। পরে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট দুই লাখ ৫০ হাজার টনের চাহিদা দেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। অন্যদিকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চাহিদা তিন লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন থাকলেও তারা নিজেরা পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করছে। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস অয়েলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকে। আর মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ফার্নেস অয়েলর দাম দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে এক লিটার আমদানি ফার্নেস অয়েলের দাম ৬০ টাকা। আর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিক্রি করছে ৫৩ টাকায়। ফার্নেস অয়েলের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় কমাতে বিপিসি থেকে ফার্নেস অয়েল কেনার চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়েও সরকার-নির্ধারিত দর কম। এতে বিসিপির লিটারপ্রতি লোকসান প্রায় সাত টাকা।

বিপিসির পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিপিসি ফার্নেস অয়েল বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ছয় হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন। একইভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সাত লাখ ১১ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আট লাখ ছয় হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৯ লাখ ২৫ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিক্রি ছিল ছয় লাখ ৮৩ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের তিন লাখ ৬৪ হাজার ২৪১ মেট্রিক টন।

বিসিপির কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে ফার্নেস অয়েল আমদানি শুরু করে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। ফলে বিপিসি থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ফার্নেস নেয়া কমিয়ে দেয়। তবে আইপিপিগুলোকে ফার্নেস অয়েল আমদানির সুযোগ দেয়া হলেও শর্ত ছিল ১০-১২ শতাংশ ফার্নেস অয়েল বিপিসি থেকে নিতে হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কম থাকায় বিপিসি থেকে আইপিপিগুলো ফার্নেস অয়েল নেয়নি। চলতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে আইপিপিগুলো বিপিসি থেকে ফার্নেস অয়েল নেয়া শুরু করে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে আইপিপিগুলোর জন্য দুই লাখ ৪৯ হাজার টন ডিজেল এবং দুই লাখ ৮৬ হাজার টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহের চাহিদা দেয় পিডিবি।

অন্যদিকে বিপিসির অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত এক বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারের ফার্নেস অয়েলের টনপ্রতি দাম ছিল ২৫০ ডলার, যা বর্তমানে ৪৬৫ ডলার। এ কারণে বেশ কয়েক বার ফার্নেসের দাম বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে লিটারপ্রতি ৫৩ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে, যা এর আগে ছিল ৪১ টাকা। এমনকি ৩৪ টাকাও ছিল। যদিও ৫৩ টাকায় বিক্রি হলেও আমাদের লিটারপ্রতি লোকসান ছয়-সাত টাকা।

বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বণ্টন ও বিপণন) মোরশেদ হোসাইন আজাদ বলেন, পিডিবির চাহিদা ছিল দেড় লাখ টন। আর আমাদের ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে পাওয়া যায় তিন লাখ টন। অর্থাৎ পিডিবির চাহিদা ইআরএল থেকে প্রাপ্ত ফার্নেস দিয়ে পূরণ করতে পারি। হঠাৎ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় ফার্নেস অয়েলের চাহিদা বেড়ে গেছে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বৃদ্ধি এবং গ্যাস সংকট। ফলে ফার্নেসের চাহিদা বেড়েছে। এতে ফার্নেসের মজুত কিছুটা কমলেও চলতি মাসে সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টন ফার্নেস আসবে। পরবর্তীকালে আরও ৮০ হাজার টন আসবে। ফলে কোনো সমস্যা হবে না।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ফার্নেস অয়েলনির্ভর বেসরকারি আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্লান্ট) ২৬টি এবং সরকারি ২০ মিলে দেশে ৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় ফার্নেস অয়েলের চাহিদা রয়েছে মাসে ১৫ হাজার টন এবং বেসরকারিগুলোয় ৪৫ হাজার টন চাহিদা রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০