Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 6:18 pm

বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগের হিসাবে বড় গরমিল

ইসমাইল আলী: দেশে জ্বালানি তেল আমদানির তথ্যে যেমন রয়েছে গোঁজামিল। তেমনি এগুলোর বিক্রির সঠিক কোনো হিসাবও নেই। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি পণ্য বিক্রির এক হিসাব দিচ্ছে। আবার জ্বালানি বিভাগ দিচ্ছে আরেক হিসাব। গত অর্থবছর দুই হিসাবে গরমিল ছিল প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য কয়েকশ’ কোটি টাকা।

বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছর বিপিসির হিসাবে দেশে ১৪ ধরনের জ্বালানি পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬৯ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে ওই ১৪ ধরনের জ্বালানি পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দুই হিসাবের পার্থক্য ২৭ হাজার ৫৮৯ মেট্রিক টন।

তথ্যমতে, বরাবরের মতোই গত অর্থবছর দেশে সবচেয়ে বিক্রি হয়েছে ডিজেল। বিপিসির হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছর ডিজেল বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৮ লাখ ৫০ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। তবে জ্বালানি বিভাগের হিসাবে এর পরিমাণ ছিল ৪৮ লাখ ৩২ হাজার ৯০১ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এ জ্বালানি তেল বিক্রিতে পার্থক্য ছিল ১৭ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন।

জ্বালানি পণ্য বিক্রির দিক থেকে এরপর রয়েছে ফার্নেস অয়েল। ২০২১-২২ অর্থবছর বিপিসির হিসাবে দেশে ফার্নেস অয়েল বিক্রি হয়েছে পাঁচ লাখ ৭১ হাজার ৫৮৬ মেট্রিক টন। তবে জ্বালানি বিভাগের হিসাবে এর পরিমাণ পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দুই তথ্যে পার্থক্য তিন হাজার ৪৮২ মেট্রিক টন। ডিজেল বিক্রি বিপিসি বেশি দেখালেও ফার্নেস অয়েল বিক্রি বেশি দেখিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।

২০২১-২২ অর্থবছর পেট্রোল বিক্রিও বেশি দেখিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। গত অর্থবছর বিপিসির হিসাবে পেট্রোল বিক্রির পরিমাণ ছিল চার লাখ ৪৬ হাজার ৬৪৭ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে এর পরিমাণ ছিল চার লাখ ৪৭ হাজার ৭২৯ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এ জ্বালানি তেলের বিক্রিতে পার্থক্য এক হাজার ৮২ মেট্রিক টন। একইভাবে জেট ফুয়েল বিক্রিও বেশি দেখিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। গত অর্থবছর বিপিসির হিসাবে জেট ফুয়েল বিক্রির পরিমাণ ছিল চার লাখ ২৮ হাজার ২৪ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে এর পরিমাণ ছিল চার লাখ ৩১ হাজার ৪০১ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এ জ্বালানি তেলের বিক্রিতে পার্থক্য তিন হাজার ৩৭৭ মেট্রিক টন।

এদিকে বিপিসি দেখিয়েছে গত অর্থবছর দেশে অকটেন বিক্রি হয়েছে তিন লাখ ৯৫ হাজার ৬০২ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে এর পরিমাণ তিন লাখ ৯৩ হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন। অর্থাৎ অকটেন বিক্রিতে পার্থক্য এক হাজার ৮৩১ মেট্রিক টন। এ জ্বালানি পণ্যের বিক্রি বেশি দেখিয়েছে বিপিসি। আবার কেরোসিন বিক্রি বেশি দেখিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। তাদের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর দেশে কেরোসিন বিক্রি হয়েছে ৮৬ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন। আর বিপিসির হিসাবে ওই সময় কেরোসিন বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮৬ হাজার ২৫৯ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দুই তথ্যে পার্থক্য ১৪২ মেট্রিক টন।

মূল এসব জ্বালানি ছাড়াও অন্যান্য পণ্য বিক্রির হিসাবে গরমিল রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পার্থক্য লুব অয়েলে। গত অর্থবছর বিপিসির হিসাবে লুব অয়েল বিক্রি হয়েছে ১৯ হাজার ৯১১ মেট্রিক টন ও জ্বালানি বিভাগের হিসাবে এর পরিমাণ ১৩ হাজার ৩১৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দুই হিসাবে পার্থক্য ছয় হাজার ৫৯৩ মেট্রিক টন, যা বেশি দেখিয়েছে বিপিসি। একইভাবে তারপিন তেল (এমটিটি) বিক্রিও বেশি দেখিয়েছে বিপিসি। সংস্থাটির তথ্য বলছে, ওই অর্থবছর দেশে তারপিন বিক্রির পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৩৯৯ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগ তথ্য বলছে এ পণ্যটির বিক্রির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৫৮৭ মেট্রিক টন। অর্থাৎ তারপিন বিক্রি বেশি দেখানো হয়েছে তিন হাজার ৮১২ মেট্রিক টন।

এলপিজির বিক্রিও বেশি দেখিয়েছে বিপিসি। তাদের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছর বিপিসি এলপিজি বিক্রি করেছে ১০ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে এলপিজি বিক্রির পরিমাণ ছিল আট হাজার ১৫৭ মেট্রিক টন। দুই তথ্যের মাঝে পার্থক্য দুই হাজার ৬৪৯ মেট্রিক টনের। একইভাবে জুট ব্লাচিং অয়েল (জেবিও) বিক্রি বেশি দেখিয়েছে বিপিসি। সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত অর্থবছর বিপিসি জেবিও বিক্রি করেছে ১০ হাজার ৩৯৪ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে জেবিও বিক্রির পরিমাণ ছিল আট হাজার ৪৫৪ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দুই তথ্যের মাঝে পার্থক্য এক হাজার ৯৪০ মেট্রিক টনের।

২০২১-২২ অর্থবছর মেরিন ফুয়েল বিক্রিও বেশি দেখিয়েছে বিপিসি। সংস্থাটির হিসাবে, গত অর্থবছর বিপিসির এ জ্বালানি বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ২৯২ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে মেরিন ফুয়েল বিক্রির পরিমাণ  ছিল ৩০ হাজার ৯০ মেট্রিক টন। দুই তথ্যের মাঝে পার্থক্য এক হাজার ২০২ মেট্রিক টনের। একইভাবে লাইট ডিজেল অয়েল (এলডিও) এবং স্পেশাল বয়েলিং পয়েন্ট সলভেন্ট (এসবিপিএস) বিক্রি বেশি দেখিয়েছে বিপিসি। সংস্থাটির হিসাবে, এ দুই ধরনের জ্বালানি বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৭২৩ ও ৭৪৪ মেট্রিক টন। আর জ্বালানি বিভাগের হিসাবে এ দুই ধরনের জ্বালানি বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪৭০ ও ৫৯২ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এলডিও বিক্রি বেশি দেখানো হয়েছে ২৫৩ ও এসবিপিএস ১৫২ মেট্রিক টন। যদিও গত অর্থবছর বিটুমিন বিক্রি বেশি দেখিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। তাদের তথ্যমতে, গত অর্থবছর বিপিসি দেশে বিটুমিন বিক্রি করেছে ৫৬ হাজার ৫৫১ মেট্রিক টন। তবে বিপিসি বলছে, তারা বিটুমিন বিক্রি করেছে ৫৫ হাজার ৯৯২ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দুই তথ্যে পার্থক্য ৫৫৯ মেট্রিক টন।