বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, খুলে দেয়া হয়েছে ৪৪ গেট

প্রতিনিধি, নীলফামারী: ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি ফের বেড়েছে। গতকাল সোমবার ডালিয়া পয়েন্টের গেজ পাঠক (পানি পরিমাপক) নূরুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার (৫২.৬০) দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল; যা বেলা ৩টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা নদীর পানির ব্যবস্থাপনায় ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

এদিকে ডিমলা টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বাম তীরের চরখড়িবাড়ি এলাকার দেড় কিলোমিটার বালির বাঁধের ১০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ওই বাঁধের ভেতর দিয়ে নদীর পানি চরে প্রবেশ করায় সেখানকার প্রায় দেড় শতাধিক বিঘা আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। এছাড়া নদীর ডান তীরের প্রধান বাঁধঘেষে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় সেখানকার আমন ধানের ৫০ বিঘা জমিও তলিয়ে গেছে।

এদিকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পানি বাড়ায় ১০টি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিকালে নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ভাঙনকবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

উপজেলার চরখড়িবাড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদীর বাম তীরে যে বালির বাঁধ রয়েছে, তা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। ওই বাঁধ টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টাও করা হয়। তবে বাঁধের ওপর বোমা মেশিন বসিয়ে এলাকার কিছু প্রভাবশালী মানুষ পাথর ভাঙার কাজ করেন। এতে বাঁধের ক্ষতি হয়।

ভেন্ডাবাড়ি এলাকার জলিল মিয়া (৪৮) বলেন, ভাঙনে ভিটেমাটি সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে নদীর পানির স্রোত সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও কিছুই করার নেই।

একই এলাকার ভিটেমাটি আর ঘরবাড়ি হারিয়ে মনজিলা বেগম বলেন, ‘আমার একটা ঘর ছাড়া আর কিছুই নিয়া আসতে পারি নাই। স্রোতে সব ভেসে গেছে।’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরে প্রভাবশালীরা ওই বালির বাঁধ ঘিরে বোমা মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করায় উজানের ঢলে আজ বাঁধটির ১০০ মিটার বিলীন হলো। এ ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে বোমা মেশিন জব্দ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।

টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মঈনুল হক বলেন, উজানের ঢল ও নদীর পানি বাম তীরে চাপ বেশি থাকায় বাঁধটির ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলার ২২টি চরও প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘আমাদের এলাকার প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। টেপাখড়িবাড়ি এলাকায় সাড়ে ৩০০ পরিবার, খালিশাচাঁপানি এলাকায় ৪০০, ঝুনাগাছ চাপানি এলাকার সাড়ে ৩০০ পরিবারের বসতভিটা তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে খালিশাচাঁপানি এলাকায় ব্যাপক ভাঙনও দেখা দিয়েছে। মানুষজনও আতঙ্কে রয়েছেন।’

নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, ‘সকাল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার (৫২.৬০) দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল; যা বেলা ৩টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষায় ৪৪টি সøুইসগেট খুলে দেয়া হয়েছে। আপাতত পানি কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। বর্তমান পরিস্থিতিতে পানির প্রবাহ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত আছে।

পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পূর্ব খড়িবাড়ী, কিছামত, ছোটখাতা, হরিশের চরসহ ৮টি চরের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০