শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাজনৈতিক দল বিএনপির ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধ-কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার ঢাকা এবং চট্টগ্রামে কয়েকটি বাস ও ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রাজধানীর মুগদা, সাভার এবং চট্টগ্রামে অন্তত চারটি বাসে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া সিলেট এবং বগুড়ায় অবরোধকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নেতাকর্মী মারা যাওয়ায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় এবং কিশোরগঞ্জে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল পালন করেছে বিএনপি।
অন্যদিকে প্রথম দিনের মতো অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও ঢাকার রাস্তায় প্রায় সব ধরনের গাড়ির সংখ্যা কম দেখা করা গেছে। ফলে যানজটও ছিল না। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। এছাড়া গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকেও দূরপাল্লার বাস খুব একটা ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। যদিও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া গত ১১ দিনে প্রায় ২ হাজার ১০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাজধানীর মুগদায় একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে মুগদা আইডিয়াল স্কুলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে মুগদা থানার ওসি মো. আব্দুল মজিদ নিশ্চিত করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া গতকাল ভোরে সাভারের মধুমতী মডেল টাউন এলাকায় একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। বাসটির সহকারী, যিনি ঘটনার সময় বাসের ভেতরেই ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি জানান, ভোর ৬টার দিকে একদল লোক এসে প্রথমে বাসের জানালার কাচ ভেঙে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এরপর তিনি দ্রুত বাস থেকে বের হয়ে যান। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় বাসের আগুন নেভানো হয়। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সকাল ১০টার দিকে বিজিবিকেও ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়। এ ছাড়া চট্টগ্রামেও গতকাল সকালে দুটি পরিবহনে আগুন দেয়া হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এর আগে অবরোধের প্রথম দিনে নিহতদের দলীয়কর্মী দাবি করে এর
প্রতিবাদে গতকাল কিশোরগঞ্জ এবং সিলেট বিভাগের সব জেলায় হরতাল পালন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে সিলেট শহরে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে শেয়ার বিজের স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, হরতাল-অবরোধের সমর্থনে বুধবার সকালে সিলেট শহরে মিছিল বের করেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বন্দরবাজার এলাকা এলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রতিনিধিকে জানান সিলেটের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ। তবে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে সকাল-সন্ধ্যা এবং কিশোরগঞ্জে অর্ধবেলা হরতাল পালনকালে কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
বগুড়ায় সড়ক অবরোধ করতে গেলে বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে বলে জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. স্নিগ্ধা আখতার।
এদিকে প্রথম দিনের মতো অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও ঢাকায় সীমিত সংখ্যক যান চলাচল করতে দেখা গেছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকার ধানমন্ডি, গ্রিনরোড, কারওরান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, মহাখালী, বনানী, গুলশান, মিরপুর, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাস্তায় তুলনামূলক কম সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান এবং ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। এছাড়া রিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা অন্যান্য দিনের মতোই দেখা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা বাড়তে দেখা যায়। গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে স্বাভাবিক দিনের মতোই ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা কম ছিল। গতকাল সকাল থেকে ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি। গাবতলী টার্মিনালে বাসের টিকিট কাউন্টারগুলোর বেশিরভাগ বন্ধ দেখা গেছে। যে অল্পসংখ্যক টিকিট বিক্রেতা সকালে কাউন্টার খুলেছিলেন, যাত্রীর অভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় তারা দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়তে পারেননি বলে জানিয়েছেন। গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গের ২৬টি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলায় প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার ২০০ যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অবরোধ শুরু হওয়ার পর দূরপাল্লার বাসগুলো বন্ধ থাকায় পরিবহন ব্যবসায় স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে জানান বাসের টিকিট বিক্রেতারা। একই চিত্র দেখা গেছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও।