বিমসটেক এগিয়ে নিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে:  সুমিত নাকানডালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমরা আজ এখানে এসেছি, সেটাই একটা বড় অর্জন। কারণ এখানে কোনো সংসদ আসেনি, এমনকি বাংলাদেশও না। এখানে এসে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। আমরা ফিরে গিয়ে বিষয়গুলো আরও পর্যালোচনা করব। অন্যদের সঙ্গে আলাপ করব। বিমসটেককে এগিয়ে নিতে সংসদের যদি কিছু করার থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই করব।

গতকাল শুক্রবার ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয়ে ভুটানের সংসদের উভয় কক্ষের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এসব কথা বলেন সংস্থাটির মহাসচিব সুমিত নাকানডালা।

মহাসচিব বলেন, বঙ্গোপসাগর উপকূলের দেশগুলোর মধ্যে বহুমুখী সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুতে গঠিত বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ানো হবে।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের এ সংস্থার পাঁচটি সদস্য দেশ দক্ষিণ এশিয়ার আরেক জোট সার্কের সদস্য হলেও আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিসমটেকের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বাড়িয়ে অনেক কিছু অর্জনের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

ভুটানের সংসদের উচ্চ কক্ষের সদস্য সোনম কিংওয়ার নেতৃত্বে উভয় কক্ষের প্রতিনিধি দলটি বিমসটেক সচিবালয়ে যায়। আইপিইউ সম্মেলনে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন তারা। বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এই প্রথম কোনো দেশের সংসদীয় প্রতিনিধি দল বিমসটেক সচিবালয়ে গেলো।

এক মতবিনিময়ে তারা বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর ওপর যেমন জোর দিয়েছেন, তেমনি সংসদের ভূমিকার কথাও এসেছে।

বিমসটেক মহাসচিব সুমিত নাকানডালা বলেন, ?যদিও আমরা ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, কিন্তু এখনও বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারিনি। এটা কেবল কর্মকর্তাদের কাজের ফাঁক নয়, আমি জাতীয় সংসদগুলোর সমর্থনও দেখিনি। আমি দোষারোপ করছি না, কারণ এখানে আরেকটি বিষয় রয়েছে। আমরা কখনোই আইন প্রণেতা ও সংসদ সস্যদের এ বিষয়ে যথাযথভাবে জানাতে পারিনি। সচিবালয় না থাকা কাজের ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা ছিল, সচিবালয়ের বয়স এখন দুই বছর। আমরা সেটা করার চেষ্টা করছি। ১৯৯৭ সালে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন- বিমসটেক গঠিত হয়। ব্যাংকক ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শুরুতে বাংলাদশ-ভারত-শ্রীলঙ্কা-থাইল্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন-বিসটেক নামে যাত্রা শুরু করলেও পরে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান যোগ দিলে এ জোটের নাম হয় বিমসটেক। জোটের সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক যোগাযোগ এবং বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর জোর দিলেও এখনও লক্ষ্য অর্জন থেকে পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের এ পর্যবেক্ষণের সঙ্গে বিমসটেক মহাসচিবও অনেকটা একমত।

মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিমসটেক সামিটের পর ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিমসটেক নেতাদের আর দেখা হয়নি, এটা কোনো সংস্থার জন্যই ভালো না। যথাসম্ভব নিয়মিত নেতাদের দেখা হওয়া উচিত। সার্কে যাই হোক, এর দিকে তাকালে আমরা দেখব, এ সংস্থাটি নেতাদের বছরে একবার বসার সুযোগ করে দিয়েছে। বহুমুখী রাজনৈতিক পরিবেশের এই দক্ষিণ এশিয়ায় এটা অনেক বড় অর্জন। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্কের শীর্ষ নেতাদের বছরে একবার করে সম্মেলনে অংশ নেওয়ার রেওয়াজ থাকলেও বিমসটেকে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের দুই বছর পর পর সম্মেলন করার কথা।

তবে বিমসটেক প্রতিষ্ঠার প্রায় ২০ বছরে মাত্র তিনটি শীর্ষ সম্মেলন করেছে। ২০০৪ সালে ব্যাংককে সংস্থাটির প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের পর সর্বশেষ তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলন হয় ২০১৪ সালে, মিয়ানমারে। মাঝখানে ২০০৮ সালে দিল্লিতে হয় দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন।

সুমিত নাকানডালা বলেন, সার্ক অনেক কিছু অর্জন করেছে, কিন্তু আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও অনেক কিছু অর্জন করার আছে।

কিছু বিষয়ে সদস্য দেশগুলো এখন একমত জানিয়ে এ অঞ্চলের উগ্রপন্থা ও মৌলবাদ কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে সবার মধ্যে মতৈক্য রয়েছে বলেই মনে করছেন বিমসটেক মহাসচিব।

তিনি বলেন, এজন্যই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠক করা, গত মাসে দিল্লিতে যেটা হয়েছে। আরেকটি হচ্ছে, বঙ্গোপসাগরীয় এলাকায় একই নিরাপত্তা বলয় রয়েছে; এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সন্ত্রাস ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলা ছাড়াও বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে ১৩টি কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, পর্যটন, মৎস্য, কৃষি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য, জনগণ-জনগণ যোগাযোগ, দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন।

মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনে সংসদের ভূমিকার প্রসঙ্গ বিমসটেক সেক্রেটারি জেনারেল তুললে এ প্রসঙ্গে ভুটান দলের সোনাম কিংওয়ার বলেন, আমরা আসলে এ বিষয়ে খুব একটা অবগতও নই। তাই হয়তো এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০