Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:09 pm

বিমানের কাছে বিপিসির পাওনা দেড় হাজার কোটি টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ছয় বছর ধরে জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ করছে না। এতে সংস্থাটির কাছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে গেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। আর্থিক সংকটের কথা বলে ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিপিসিকে তেল বিক্রির কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি বিমান।

তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিমানের নিট মুনাফা ২৭৬ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে সংস্থাটির নিট মুনাফা ছিল ৩২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত দুই অর্থবছরে ৬০০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। জ্বালানি তেলের দাম অনেক কমে যাওয়ায় লোকসান কাটিয়ে এখন একটি লাভজনক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এরপরও জ্বালানি তেলের দাম পরিশোধে কোনো উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রায়ত্ত এ বিমান সংস্থাটির।

আর্থিক সংকটের কথা বলে ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিপিসি থেকে বাকিতে জ্বালানি তেল কেনে বিমান। গত ছয় বছরে বিমান এক হাজার ৮৮ কোটি সাত লাখ টাকার তেল কিনেছে। দীর্ঘ সময় ধরে পাওনা পরিশোধ না করায় এ বকেয়ার সঙ্গে ৪৫২ কোটি ৩১ লাখ টাকার সুদ যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাছে বিপিসির বকেয়া এক হাজার ৫৪০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বকেয়া পরিশোধে বিমানকে বারবার তাগাদা দিয়ে সাড়া পাচ্ছে না বিপিসি।

পাওনা পরিশোধের জন্য জ্বালানি বিভাগ বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। এরপরও বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে না। এতে গত জানুয়ারি থেকে বিমানকে বাকিতে তেল দেওয়া বন্ধ করেছে বিপিসি। এখন নগদ অর্থে তেল কিনছে বিমান। তবে বকেয়া জ্বালানি তেলের টাকা পরিশোধে কোনো উদ্যোগ দেখছে না বলে জানায় বিপিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএম মোসাদ্দেক আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা টাকা পরিশোধ শুরু করেছি। তবে বিপিসির এতো টাকা পাওনা হবে না। এর পরিমাণ আরও কম। পাওনাগুলো আমরা দ্রুত পরিশোধের উদ্যোগ নেব।’

বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিমানে মোট যাত্রী পরিবহন করে ২৩ লাখ ১৮ হাজার। আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ লাখ ২০ হাজার। আর কার্গো পরিবহন খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪০ হাজার ৯০০ টন মালামাল পরিবহন করেছে বিমান। এটি আগের অর্থবছরের চেয়ে সাত শতাংশ কম। তবে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে যুক্তরাজ্য সরকার কর্তৃক কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে কার্গো পরিবহন তুলনামূলক কিছুটা কম হয়েছে।

বিপিসির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ গ্রাহকের কাছে বিপিসির পাওনার পরিমাণ দুই হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। বকেয়া পরিশোধে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। দশ প্রতিষ্ঠানের বকেয়ার মধ্যে এককভাবে বিমানের কাছেই বিপিসির পাওনা ১ হাজার ৫৪০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) কাছে ৩৯৯ কোটি ৪৮ লাখ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে ২৪ কোটি ৪৬ লাখ, বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে ৮৭ কোটি ৯৩ লাখ, প্রতিরক্ষা সার্ভিসেসের কাছে ১২৩ কোটি ২৭ লাখ, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের কাছে ৪৩ কোটি ৬৪ লাখ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ১৫ কোটি ৪২ লাখ ও বিআইডব্লিউটিসির কাছে ৪০ লাখ, পেট্রোবাংলার কাছে ২ লাখ। এটা দুই প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ দেনা-পাওনা থেকে সমন্বয় করা হবে বলে বিপিসি সূত্রে জানা গেছে। শিপিং করপোরেশনের জাহাজে তেল পরিবহন করে বিপিসি। সেই জাহাজ ভাড়ার অর্থ বকেয়া থেকে সমন্বয় করা যাবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং প্রতিরক্ষা সার্ভিসের বকেয়াও একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিমানের পাওনা নিয়ে।

বিপিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিমান ছাড়া সব দেশি-বিদেশি উড়োজাহাজ সংস্থা নগদে বিপিসির কাছ থেকে তেল কেনে। তাদের কাছে বিপিসির কোনো বকেয়াও নেই। কিন্তু আর্থিক সংকটের কথা বলে ২০১১ সালের পর থেকে ২০১৬-এর শেষ পর্যন্ত বিপিসিকে কোনো টাকাই দেয়নি বিমান। তারা আরও বলেন, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সব বিমান সংস্থার কাছে জেট ফুয়েল বিক্রি হয়েছে ৩ দশমিক ৪৭ লাখ টন। এর আগের বছরে ছিল ৩ দশমিক ৩৮ লাখ টন।

এ ব্যাপারে বিপিসির পরিচালক (পরিচালন ও উন্নয়ন) সৈয়দ মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক শেয়ার বিজকে বলেন, বাংলাদেশ বিমানসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে বিপিসির পাওনা আদায়ে আমরা তৎপর। কেননা বিশাল অঙ্কের এ পাওনা টাকা আমাদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে লাগবে।

উল্লেখ্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ১৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে এবং সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করছে বিমান বাংলাদেশ। নিজস্ব ফ্লাইট ছাড়াও ২৬টি বৈদেশিক এয়ারলাইনসের ১৮ হাজার ৬২৮টি ফ্লাইট হ্যান্ডলিং করেছে বিমান। বিমান বহরে রয়েছে বোয়িংয়ের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির চারটি ব্র্যান্ডনিউ বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর ও দুটি ব্র্যান্ডনিউ বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফট। এছাড়া বহরে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি লিজে সংগ্রহকৃত দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ এবং দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের জন্য দুটি ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ এয়ারক্রাফট। আগামীতে  ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিমানবহরে যুক্ত হচ্ছে বিশ্বের সর্বাধুনিক ব্র্যান্ডনিউ চারটি বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭।