নিজস্ব প্রতিবেদক: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন এ সংস্থার পরিচালক যাহিদ হোসেন। সরকারের এ অতিরিক্ত সচিবকে বিমানের নতুন এমডি করে গতকাল বুধবার আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যাহিদ হোসেন রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান পরিবহন সংস্থার ওই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আবু সালেহ মোস্তফা কামালের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।
বিমানের প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক যাহিদ হোসেন একই সঙ্গে প্রকিউরমেন্ট ও লজিস্টিক সাপোর্ট এবং মার্কেটিং ও সেলসের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বিমানের এমডির দায়িত্ব সামলে আসা আবু সালেহ মোস্তফা কামালকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদেও পরিবর্তন এনেছে সরকার। ওই দায়িত্ব পেয়েছেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব সামলে আসা অতিরিক্ত সচিব আব্দুল ওয়াহার ভূঞা।
প্রজ্ঞাপনে বিমানের এমডির বদলির কারণ ‘জনস্বার্থ’ উল্লেখ করা হলেও অনেকেই বলছেন সাম্প্রতিক বিমানের নানা ‘অনিয়ম’-এর কারণে বদলি হয়েছেন তিনি।
বিমানের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চার কোটি টাকার বেশি খরচ করে কানাডার টরন্টোতে পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা, পাইলট নিয়োগে অনিয়ম, পরিকল্পনা অনুযায়ী নিউইয়র্ক, টরন্টো ফ্লাইট পরিচালনা করতে না পারা, দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের চাকরিতে বহাল করার মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল। মূলত টরন্টো রুটে বারবার পরিবর্তন আনা ও পাইলট নিয়োগে অনিয়মই তাকে সরানোর মূল কারণ বলে জানা গেছে।
একটি সূত্র দাবি করছে, বিমানের এ এমডি বেশ শৃঙ্খল ছিলেন। পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবকে চাকরিচ্যুত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন। বিমানে ‘ক্যানসারের মতো পচনধরা অংশ কেটে ফেলা’র ঘোষণার মতো কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে এমডিকে সরিয়ে দিতে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিল। এ ছাড়া বিমানবন্দরে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটার পরিণতি হিসেবে বদলি হয়ে থাকতে পারেন এমডি।
বদলির প্রকৃত কারণ জানতে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাড়া পাওয়া যায়নি। হজে থাকায় কথা বলতে পারেননি ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেয়া ড. আবু সালেহ্? মোস্তফা কামাল সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। জানা যায়, শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক (সম্মান) এবং একই বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পিএইচডি করেন মাশরুম সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণসহ ফুড সেফটির ওপর।
গবেষণার নিদর্শনস্বরূপ ‘পুষ্টিসমৃদ্ধ মাশরুম জুস’ ও ‘মাশরুম-ড্রায়ার’ আবিষ্কারের জন্য ড. সালেহ্ দুটি পেটেন্টের অধিকারী হন। এমন অর্জন বাংলাদেশের সিভিল সার্ভেন্টদের মধ্যে আর কারও নেই। এ ছাড়া তিনি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভ করেন। একাদশ বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের এ সদস্য মানিকগঞ্জ, দৌলতপুর, কোটালীপাড়া, মধুখালী, ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পরিচালক (হজ) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।