Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:45 pm

বিমান পরিচালনায় বাধা দিলে মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিমান পরিচালনায় বাধা দিলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘বেসামরিক বিমান চলাচল আইন, ২০১৭’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, ‘সিভিল এভিয়েশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০’-কে হালনাগাদ করে নতুন আইনের খসড়াটি আনা হয়েছে এবং নতুন আইনে অপরাধের দণ্ড বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা বেপরোয়াভাবে এমন কোনো কাজ করেন, যাতে নির্বিঘœভাবে বিমান পরিচালনায় অসুবিধার সৃষ্টি হয় এবং এর মাধ্যমে কোনো মানুষের জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, তবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এজন্য মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। এছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি বিমানের নেভিগেশনের সঠিক আলো বা সংকেতের কার্যক্রম বা পরিচালনায় হস্তক্ষেপ, অপসারণ বা ধ্বংস করেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।’

এর আগে গত বছরের ২৯ ফেরুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইনের খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তখন সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল সাত বছরের জেল, জরিমানা ছিল সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা।

তিনি জানান, এ আইন, আইনের আওতায় বিধি ও এয়ার নেভিগেশন অর্ডার (এএনও) লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

সার্টিফিকেট, লাইসেন্স বা পারমিট জাল করলেও সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

বিমানে বিপজ্জনক পণ্য পরিবহনে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিপজ্জনক পণ্য বলতে এমন কোনো দ্রব্য বা বস্তু যা স্বাস্থ্য, সম্পত্তি বা পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে। যা আইসিএও’র (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশন) টেকনিক্যাল নির্দেশনায় বিপজ্জনক তালিকার অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশের আকাশসীমা কেউ লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ সাত বছর ও কমপক্ষে তিন বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের আকাশসীমায় অবৈধভাবে ঢুকে পড়লে শাস্তির কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

উল্লেখ্য, গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ‘পানি শীর্ষ সম্মেলন-২০১৬’-এ অংশ নিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন। হাঙ্গেরি পৌঁছার আগেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান তুর্কেমেনিস্তানের আশখাবাদে জরুরি অবতরণ করে। পরে তদন্ত কমিটি চিহ্নিত করে বিমানের তেল চলাচলের পাইপে একটি নাট ঢিলা হওয়ার কারণে জ্বালানির চাপ কমে যাওয়ার বিমান জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে এটা হয়েছে। এজন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কয়েকজন কর্মীকে বরখাস্ত করা করা ছাড়াও মামলা ও গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে বেসামরিক বিমান চলাচল আইনের খসড়ায় শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে বলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৭’, ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আইন, ২০১৭’, ‘খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৭’ ও ‘বস্ত্রনীতি-২০১৭’-এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কানাডার আদালতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মামলাটি খারিজ হয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা এবং একই সঙ্গে সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

প্রসঙ্গ: পদ্মা সেতুর দুর্নীতি মামলা

গত ১০ ফেব্রুয়ারি পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নিছক গুজব বলে রায় দিয়েছেন কানাডার আদালত। কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এলএনসি-লাভালিনের অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তাকেও মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় রায়ে। এ দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ বাতিল করেছিল বিশ্বব্যাংক।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অবস্থান ছিল পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি এবং বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল, যদি তারা দুর্নীতির কথা বলে, সেটা তাদের প্রমাণ করতে হবে। তারা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে। এজন্য মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে।’

‘বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না’Ñএমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘না না, আলোচনায় শুধু আমাদের অবস্থানই তুলে ধরা হয়েছে। এত দিনে ব্রিজটা আমরা বাস্তবে পেয়ে যেতাম, স্ক্যান্ডালের কারণে আমাদের এ উন্নয়নটা আমাদের অনেক পিছিয়ে গেছে। এ আলোচনাটা হয়েছে। তবে একটা প্রসঙ্গ এসেছে, এডিবির (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) একটি স্টাডি হচ্ছে পদ্মা সেতু হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। যদি পদ্মা সেতু আরও আগে হতো তাহলে আমাদের প্রতিবছর ১ দশমিক ২ হিসেবে ৮ থেকে ৯ শতাংশ গ্রোথ হতো। এ গ্রোথটা আমাদের কমে গেছে।’

‘এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন’ জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা তার চ্যালেঞ্জ ছিল যে, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক যখন অভিযোগ করেছে, তখন তাদেরই প্রমাণ করতে হবে যে, আমরা দুর্নীতি করেছি। আমরা প্রমাণ করেছি যে, আমরা কোনো দুর্নীতি করিনি এটাই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মূল বক্তব্য।’

রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়ার ত্রাণসামগ্রী

বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মালয়েশিয়া সরকারের একটি জাহাজ গতকাল সোমবার কক্সবাজারে পৌঁছেছে।

মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ত্রাণবাহী জাহাজ মালয়েশিয়া সরকার পাঠিয়েছে, সেটা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিদেশ থেকে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য পাঠানো হলো। ‘ফ্লোটিলা’ নামের জাহাজটি কুতুবদিয়ার বহির্নোঙরে নোঙর করেছে ইতোমধ্যে। সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে কক্সবাজারে ত্রাণ নিয়ে আসা হবে। কক্সবাজার থেকে সরাসরি ক্যাম্পগুলোতে বিতরণ করা হবে।