Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 9:56 pm

বিমায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য:প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ‘বিমার যেকোনো কিছু অর্থাৎ বিমার দাবি নিষ্পত্তি থেকে শুরু করে বিমাসেবাকে আরও সহজীকরণে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। এটা করলে দুর্নীতি দূর হবে। এর থেকে মানুষ উপকার পাবে,’ বলে উল্লেখ করে দুঃসময়ে বিমা থাকার বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি আধুনিক তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিমা সংস্থাগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত এবং পরিষেবা আরও উন্নত করার জন্য বিমা কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল জাতীয় বিমা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ‘বিমা খাতটাকেও আপনাদের প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সূত্র: বাসস।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকেরই ইন্স্যুরেন্সটা করা থাকলে পরে তাদের যে সুবিধাটা হয়, সেটা একটু দেখা দরকার। এক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিটা এখন কার্যকর করা দরকার। পৃথিবীর সব দেশে এটা হয়ে গেছে। আমি মনে করি, আমাদের দেশেও পুরো বিমা পদ্ধতিটাকে আপনারা ডিজিটাল সিস্টেমে দাঁড় করাবেন। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। সারা দেশে ব্রড ব্র্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করেছি। মোবাইল ফোন সবার হাতে হাতে। ফোরজি আমরা চালু করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিমাটাকে আপনারা আরও মানুষের কাছে নিয়ে যান। এখন আমাদের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষ কিন্তু অনেক বেশি সচেতন। কাজেই সেদিকে থেকে আমরা মনে করিÑতা হলে মানুষের আরও আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা সম্ভব হবে। দেশের সব বিমা প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় নিয়ে এলে বিমা খাতের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হবে। কেউ ফাঁকি দিতে পারবে না। ফলে বিমার গ্রাহকদেরও আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। বিমা খাতের প্রিমিয়ামসহ দেশের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।’

“বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে স্টেট-অব-দি-আর্ট টেকনোলজি-সম্পন্ন ‘ইউনিফাইড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম’ (ইউএমপি) পদ্ধতি চালু করেছে, যা গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।” এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গাড়ি যারা ব্যবহার করে তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গাড়ির ইন্স্যুরেন্সটা সঠিকভাবে করেনি। থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স, সামান্য কিছু টাকা দিলেই সার্টিফিকেটটা পেয়ে যায় এবং গাড়ি চালাতে পারে। কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন আর কিছুই পায় না। কারও গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে সে যে টাকা পেতে পারে বা ইন্স্যুরেন্সের টাকায় গাড়ি মেরামত করাতে পারে, সে বিষয়টা মানুষকে আরও ব্যাপকভাবে জানানো দরকার। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কেউ যদি আপনাকে পেছন থেকে ধাক্কা মারে, তাহলে তার ইন্স্যুরেন্স থেকেই আপনার জরিমানার টাকা পাওয়া দরকার। যদিও ওই সিস্টেমটা আমাদের দেশে এখনও শক্তিশালীভাবে গড়ে ওঠেনি। এটা গড়ে ওঠা দরকার।’

বিমা দিবসের অনুষ্ঠানে বিমা খাতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পাঁচ ব্যক্তির মাঝে ‘বিমা পদক’ বিতরণ করেন। তিনি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) ‘বীমা ম্যানুয়েল’ ও ‘বীমা নির্দেশিকা’ নামক দুটি বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করেন। এ সময় দেশের বিমা খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়।

বক্তৃতায় বিমার উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, সাধারণ বীমা করপোরেশন এবং জীবন বীমা করপোরেশনকে পেশাদারিত্ব ও প্রযুক্তিগতভাবে আরও সক্ষম করতে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে সব বিমা প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

‘বিমা করলে মানুষ যে সুবিধাগুলো পাবে, সেগুলো মানুষের কাছে আরও ব্যাপকভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে’ বলে উল্লেখ করে কৃষকদের জন্য কৃষিবিমা, স্বাস্থ্যবিমা, রেলযাত্রীদের জন্য বিমা এমনকি ভবনের জন্য বিমা করার উদ্যোগ তুলে ধরে বিমা কোম্পানির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শিশুদের লেখাপড়া চালানো ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের জন্য শিশুর জন্মের পরপরই তাদের নামে একটি করে বিমা এবং গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্যও বিমা করা প্রয়োজন। বিমা মালিকদের প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা’ চালুর বিষয়টি সরকার পরিকল্পনায় রেখেছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহকরা বিমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামটা যাতে সঠিকভাবে দেয় সেটাও যেমন প্রয়োজন, বিমার টাকা যেন পায় এবং সঠিকভাবে পায় সেটা নিশ্চিত করাটাও জরুরি। যতটুকু ক্ষতি ততটুকুই যেন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। ফাঁকি দিয়ে নেওয়ার প্রবণতাটাও দূর করতে হবে।’

‘স্বাধীনতার পর বিমাশিল্পকে অধিকতর অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ করে ৪৯টি দেশি-বিদেশি বিমা কোম্পানিকে জাতীয়করণের মাধ্যমে সুরমা, রূপসা, তিস্তা ও কর্ণফুলী নামক চারটি বিমা করপোরেশন গঠন করেছিল এবং একই সঙ্গে ওই চারটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে জাতীয় বীমা করপোরেশন গঠন করা হয়’ বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। মুজিববর্ষে আমি সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এটুকু বলবÑআসুন সবাই মিলে সে প্রত্যয় ব্যক্ত করি যে, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব।’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আশরাফুল ইসলাম, আইডিআরএ চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন, বিশিষ্ট ইন্স্যুরেন্স ব্যক্তিত্ব বেগম ফরিদুর নাহার লাইলি, ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের (বিআইএফ) প্রেসিডেন্ট বিএম ইউসুফ আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।