নিজস্ব প্রতিবেদক:দেশের পুঁজিবাজার সপ্তাহের ব্যবধানে সূচকের উত্থানের মাধ্যমে গত সপ্তাহ পার করেছে। এর আগের সপ্তাহে সূচক নামমাত্র বৃদ্ধি পেলেও গত সপ্তাহে বড় উত্থান হয়েছে পুঁজিবাজারে। সপ্তাহটিতে সূচকের সঙ্গে লেনদেন বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর অপরিবর্তিত ছিল। এদিকে বিনিয়োগকারীরা দ্রুত মুনাফার আশায় অন্যান্য খাতে ঘুরলেও বিমা খাতের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। এতে আলোচ্য সপ্তাহে বিমা খাতের শেয়ার কেনায় বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। সেইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের খাত ঘুরে ঘুরে শেয়ার কেনার আগ্রহে সূচক ও লেনদেনে উত্থান হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিমা খাতে আগ্রহ সব থেকে বেশি থাকায় সপ্তাহটিতে দর বৃদ্ধি ও লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে আলোচ্য খাতের শেয়ার।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে পাঁচ হাজার ৫২১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল চার হাজার ৫৮৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৯৩৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১০৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৯১৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১০৮টির, দর কমেছে ৮১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৩টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ১০টি কোম্পানির শেয়ার।
গত সপ্তাহে ডিএসইর সব সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইএক্স ২৯ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৫৫ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ২ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ৮ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে দাঁড়ায় ২ হাজার ২০১ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৭৯ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা চার সপ্তাহ ধরে সূচকের উত্থান অব্যাহত থাকায় বিনিয়োগকারীরা মুনাফায় রয়েছেন। কারণ আশাবাদী বিনিয়োগকারীরা দ্রুত লাভের আশায় বিনিয়োগ করছেন। সেই সঙ্গে খাতভিত্তিক নানা শেয়ার তারা ক্রয় করে চলেছেন। বিনিয়োগকারীরা সাধারণ এবং জীবন বিমা উভয় ক্ষেত্রে সর্বাধিক মনোনিবেশ করছেন এং কেনার আগ্রহ তুলনামূলকভাবে বেশি দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের শেয়ারেও তাদের কেনার আগ্রহ দেখা গেছে। কারণ তারা এই বাজার থেকে দ্রুত লাভের সুযোগের বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কিছু বিনিয়োগকারীর মুনাফা সংগ্রহের জন্য বিক্রির চাপও বাজারে ছিল। এই শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে সতর্ক অবস্থান নিতে চেয়েছিলেন। আর এ কারণে কিছুটা বিক্রির চাপ ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গত সপ্তাহে আগ্রহের শীর্ষে থাকা বিমা খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিমেন্ট খাতে গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল আইটি খাতের শেয়ার। এদিকে গত সপ্তাহে শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি কমেছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে। এ খাতে গত সপ্তাহে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে। শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ারদর কমে দ্বিতীয় স্থানে ছিল সেবা ও আবাসন খাত।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে লেনদেনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিমা খাতে। খাতটিতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইটি খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। আট শতাংশ লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত।
এদিকে গত সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৫২ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে।
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ৮১ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। তালিকাভুক্ত ৩৩৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১০০টির, দর কমেছে ৭১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬৫টি কোম্পানির।
গত সপ্তাহে সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই’র উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিএএসপিআই দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৭৫৫ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। সিএসই৫০ সূচক দশমিক ৯ শতাংশ, সিএসইসিএক্স সূচক দশমিক ৬০ শতাংশ, সিএসআই সূচক দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং সিএসই এসএমইএক্স সূচক শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে এক হাজার ৩১৯ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে, ১১ হাজার ২১৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে, এক হাজার ১৭৮ দশমিক ১৯ পয়েন্টে এবং এক হাজার ৬৯০ দশমিক ১ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই৩০ সূচক শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৪০৫ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে।