নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে একটি মামলায় সাত যুক্তরাজ্য প্রবাসী ঢাকায় আসার পর গ্রেপ্তার হয়েছেন। অভিযুক্ত সবাই ‘হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’-এর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তারা ওই কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতের পরোয়ানা থাকায় মতিঝিল থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। গতকাল বিকালে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মতিঝিল থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত খান। খবর: বাংলা ট্রিবিউন।
তিনি জানান, ‘বিমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও গ্রাহকদের টাকা বুঝিয়ে দেয়নি কোম্পানিটি। এজন্য মাগুরার শালিখা উপজেলার চার ভুক্তভোগী আদালতে মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা দিয়েছিলেন। হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিস আমার থানা এলাকায়, তাই পরোয়ানা সব এই থানায় এসেছে। আমরা পরোয়ানা অনুযায়ী ২১ সেপ্টেম্বর ওই কোম্পানির অফিস থেকে তাদের গ্রেপ্তার করেছি। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এরপর কী হয়েছে, তা আর আমাদের জানা নেই।’
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার বাসিন্দা জামাল মিয়া ও তার ভাই কামাল মিয়া, বিশ্বনাথের আবদুল আহাদ ও তার ভাই আবদুল হাই, সুনামগঞ্জ ছাতকের জামাল উদ্দিন এবং মহানগরীর শাহজালাল উপশহরের আবদুর রাজ্জাক। আবদুর রব নামের আরেক ব্যক্তির বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জামাল মিয়া হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান এবং বাকি সবাই পরিচালক। গ্রাহকের পলিসির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, মাগুরার শালিখা থানাধীন আড়পাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিমা গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করায় প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করা হয়। আদালত মামলাগুলো আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আসামিদের বিরুদ্ধে।
সূত্র আরও জানায়, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ ও বিমা দাবির টাকা মিটিয়ে না দেয়ার অভিযোগ অনেক দিনের। এ ছাড়া নানা অনিয়ম রয়েছে ব্যবস্থাপনায়। এ ঘটনায় লন্ডন ও সিলেট-সুনামগঞ্জে তৈরি হয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ইউকেবিসিসিআই ও বাংলাদেশ ক্যাটারারস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে যুক্তরাজ্যের সাত বিনিয়োগকারীকে মামলা দিয়ে হয়রানি এবং গ্রেপ্তার ও জেলে পাঠানোর ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ব্যবসায়ী বজলুর রশীদ এমবিইর সভাপতিত্বে এবং ফরহাদ হোসেন টিপুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ইউকেবিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ইকবাল ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী ইকবাল আহমদ, সংগঠনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ড. এমজি মাওলা মিয়া, বিসিএর প্রেসিডেন্ট এমএ মুনিম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিসিএর সেক্রেটারি মিঠু চৌধুরী, ওলি খান এমবিই ও অন্য নেতারা। এ সময় বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী সাত প্রবাসী ব্যবসায়ীকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
আয়োজকরা বলেন, ওই সাত বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের বার্ষিক সভায় যোগদানের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কিছু জানার আগেই পুলিশ তাদের অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে মতিঝিল থানায় নিয়ে যায়।
সেখান থেকে তাদের ২০০ মাইল দূরবর্তী মাগুরা জেলে পাঠিয়ে দেয়। বাংলাদেশে পুলিশ ও বিচারব্যবস্থায় নিরপেক্ষতা ও সুবিচার না পেলে প্রবাসী ও পরবর্তী প্রজন্ম বাংলাদেশে আর কোনো বিনিয়োগ করবে না।