নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্রুত বিচার করে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়া সরকারের গভীর মাস্টারপ্ল্যানের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা কোনো কালো বিচার মেনে নেব না, আমরা ডার্ক জাস্টিস মেনে নেব না। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারিক সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। দ্রুত বিচার করে সাজা দেওয়া- এটা সরকারের একটি গভীর মাস্টারপ্ল্যানের অংশ।
রিজভী বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা কেড়ে নিয়েছে এই অবৈধ আওয়ামী সরকার। আওয়ামী লীগ এখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে যারা গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছেন বা যারা বাক স্বাধীনতার পক্ষে উচ্চকণ্ঠে কথা বলছেন তাদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। আদালতকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করে বিচারিক সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর।
তিনি বলেন, বিরোধী দলকে স্তব্ধ করার জন্য এদের সমস্ত কার্যক্রমকে স্তব্ধ করার জন্য ও নিষ্ক্রিয় করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতিপূর্বে ক্রসফায়ার, গুম, বেআইনীভাবে মামলা করেছে। এই নিপীড়ন-নির্যাতনের পরে এখন শুরু হয়েছে সাজা দিয়ে তাদেরকে বছরের পর বছর অথবা চিরদিনের জন্য আটকে রাখার একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের যে নমুনা সেই ধারা শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এদেশের মানুষ হচ্ছে গণতন্ত্রকামী। এদেশের মানুষ তাদের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। আমাদের সেই ঐতিহ্য আছে। আমরা কোনো ডার্ক জাস্টিস, কোনো অন্ধকার বিচার মেনে নেব না। এটা দলের পক্ষ থেকে আমি আপনাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলে দিলাম। কারণ এদেশের জনগণ কখনই অন্যায় মেনে নেয়নি। তারা ন্যায় বিচার ও সুশাসনের জন্য সুদীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করে আসছে।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের যে বহুবিদ মাত্রা আপনারা দেখেছেন, সেই নির্যাতনের মাত্রা একের পর এক প্রয়োগ করা হচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর। হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকলে কতকিছু করা যায়! পাহাড়ের উপর দিয়ে নৌকা চালানো যায়। সেটা এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদে পদে প্রমাণিত করছেন।২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে ব্যাপক হারে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে একতরফা নির্বাচন করেছেন। ২০১৮ সালে দিনের বেলায় ভোট করার সাহস পাননি, রাতে ভোট করেছেন। তখন আমরা একটি নতুন কবিতা শুনতে পেয়েছিলাম। সেটি হল গায়েবী মামলা। সেই গায়েবি মামলার প্রকৃতি এবং সংজ্ঞা কি হবে এটা মনে হয় আইনজীবীরা বলতে পারবেন। এর পরিনামে আমরা দেখেছি, লাশের নামে মামলা, প্যারালাইজড রোগীর নামে মামলা, পবিত্র হজ করতে গেছেন সেই ব্যক্তির নামে মামলা। তখন আমরা এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য দেখতে পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এবারে নির্বাচনের প্রাক্কালে আমরা দেখতে পাচ্ছি, শেখ হাসিনার আরেকটি অভিনব রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের বহিঃপ্রকাশ। ওই যে ২০১৩-১৪ সালের মামলায় এখন তারা সাক্ষী খুঁজে নিয়ে এসে সাক্ষীকে শিখিয়ে পরিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দের নামে তাদেরকে দিয়ে বলিয়ে সাজা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে অনেককেই দেওয়া হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজা দেওয়ার পরে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে যিনি ঐক্যবদ্ধ করেছেন আমাদের নেতা তারেক রহমান এবং তার সহধর্মিনীকেও মিথ্যা সাজা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের দলের দুইজন তরুণ নেতা আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল এবং হাবিবুর রশিদ হাবিব ওদের নামে সেই ২০১৩ সালের মিথ্যা মামলায় সাফাই সাক্ষী নেওয়া হয়েছিল। এই দুই ছাত্রনেতার সাফাই সাক্ষী ম্যাজিস্ট্রেট গ্রহণ করেন। তখন তারা রিভিশন করেছেন দায়রা জজের কাছে। জজ সাহেব সেটিকে আমলে নিয়ে গতকাল প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষণা করেছেন সেই রিভিশনটা মঞ্জুর করেছেন। রাতে বিশেষভাবে মঞ্জুর করার যে আদেশ বাতিল করে দিয়েছে। তার মানে জজ সাহেবের ওপর গায়েবি নির্দেশ আছে। এটা একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
রিজভী বলেন, এই সরকার নিশি রাতের ভোট করতে যেমন পছন্দ করে, এখন নিশি রাতের রায় দিতে তারা পছন্দ করছে। দেশের ন্যায় বিচারের ওপর দিয়ে কি পরিমাণ আঘাত ন্যায় বিচারকে যে কিভাবে পদদলিত করা হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপুসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।