নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ মহামারির কারণে ৯ মাস পিছিয়ে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার অংশ নেবে ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ শিক্ষার্থী। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সচিবালয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আগের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে সারাদেশে মোট তিন হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে।
এবার যারা পরীক্ষা দেবে, তাদের মধ্যে ১৮ লাখ ৯৯৮ জন আট শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি, তিন লাখ এক হাজার ৮৮৭ জন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিল এবং এক লাখ ২৪ হাজার ২২৮ জন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ভকেশনাল পরীক্ষায় বসবে।
২৯ হাজার ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেবে। ২০২০ সালের সঙ্গে তুলনা করলে এ বছর শীক্ষার্থী বেড়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন, বা আট দশমিক ৭৬ শতাংশ এসএসসিতে পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৮৩১ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে, ৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৫ জন মানবিক থেকে এবং তিন লাখ ৭০ হাজার ৮২ জন বাণিজ্য বিভাগ থেকে পরীক্ষা দেবে।
চলতি বছর বিদেশে ৯টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে। জেদ্দা, রিয়াদ, ত্রিপলি, দোহা, আবুধাবি, দুবাই, বাহরাইন, ওমানের সাহাম ও গ্রিসের এথেন্স কেন্দ্রে ৪২৯ জন পরীক্ষায় বসবে। মহামারি পরিস্থিতির কারণে এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কেবল তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হবে।
বাংলা ও ইংরেজির মতো আবশ্যিক বিষয়গুলোয় পরীক্ষা না নিয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি বলেছিলেন, এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি এবং এইসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের আবশ্যিক বিষয়গুলোর নম্বর দেয়া হবে। এসব বিষয়ে কোনো অ্যসাইনমেন্ট নেয়া হচ্ছে না।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে গত বছর মার্চে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়েক দফা উদ্যোগ নেয়ার পর শেষ পর্যন্ত এ বছর সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানো সম্ভব হয়। এই দেড় বছরে কোনো পাবলিক পরীক্ষায় বসতে পারেনি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গত বছর মহামারির আগে এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেলেও এইচএসসি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা পিছিয়ে এসেছে নভেম্বরে।
পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। ‘অনিবার্য কারণে’ কোনো পরীক্ষার্থীকে এরপর হলে প্রবেশ করতে দিলে তাদের নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও বিলম্ব হওয়ার কারণ একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে ওই দিনই শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে। ট্রেজারি থেকে নির্দিষ্ট তারিখের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সব সেট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।
ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়ার জন্য নির্ধারিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিটি আগে এসএমএসে সংশ্লিষ্টদের প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেয়া হবে। কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। শুধু কেন্দ্র সচিব মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন, তবে ‘ছবি তোলা যায় না’ এমন ফোনই তিনি ব্যবহার করবেন। পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
সব বিষয়ে পরীক্ষা না হওয়ার কারণে পরীক্ষার ব্যয় কমে যাওয়ায় পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে অর্থের বাড়তি অংশ ফেরত দেয়া হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে/সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অভিভাবকদেরও অনুরোধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই, এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থী এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় পাবে। প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি) পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় তাদের পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থাকবে।
১৪ নভেম্বর সকালে বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থবিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। পরদিন ১৫ নভেম্বর সকালে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এবং বিকালে হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষা হবে।
১৬ নভেম্বর সকালে রসায়ন (তত্ত্বীয়), ১৮ নভেম্বর সকালে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া (তত্ত্বীয়), ২১ নভেম্বর সকালে ভূগোল ও পরিবেশ এবং বিকালে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের পরীক্ষা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষা ২৩ নভেম্বর শেষ হবে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে না, কারণ তাদের ক্লাসের বিষয় রয়েছে। কবে, কীভাবে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে, তা পরে জানানো হবে।
দীপু মনি আরও জানান, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এ বছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন। তাদের মধ্যে এসএসসিতে ১৮ লাখ ৯৯৮ জন, দাখিলে তিন লাখ এক হাজার ৮৮৭ জন এবং ভোকেশনালে এক লাখ ২৪ হাজার ২২৮ পরীক্ষার্থী অংশ নেবে।
প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এ বছর তা সম্ভব হয়নি। আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে এ পরীক্ষা নেয়া হবে।