বিলাসী পণ্যে ২৫% করারোপ করল পাকিস্তান

শেয়ার বিজ ডেস্ক:পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজস্ব বিভাগ (এফবিআর) বিলাসবহুল দ্রব্য ও সেবার ওপর ২৫ শতাংশ সাধারণ বিক্রয় কর (জিএসটি) আরোপ করেছে। এসব পণ্য ও সেবার মধ্যে ৩৬ ধরনের আমদানি পণ্য রয়েছে। এছাড়া তিন ধরনের স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত পণ্য এ তালিকায় রয়েছে। খবর: দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

চরম অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এর সঙ্গে কমেছে রপ্তানির পরিমাণ। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আমদানি।

পাকিস্তানের গণমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের এফবিআর গত বুধবার ৩৬টি আমদানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ জিএসটি আরোপের আদেশ জারি করেছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি বা অ্যাসেম্বল করা তিন ক্যাটেগরির পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ জিএসটি আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি বা অ্যাসেম্বল করা এসইউভি এবং সিইউভি, ১৪০০ সিসি বা তার বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতা সম্পন্ন স্থানীয়ভাবে তৈরি বা অ্যাসেম্বল করা যান এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি বা অ্যাসেম্বল করা ডাবল কেবিন (৪ী৪) পিক-আপসহ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অন্যান্য পণ্য রয়েছে।

এফবিআর ধারণা করছে, আমদানি করা বিলাসবহুল পণ্যের ওপর কর বাড়ানোর মাধ্যমে তারা ৭০০ কোটি রুপি এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি গাড়ির ওপর বাড়তি করের মাধ্যমে ৪০০ কোটি রুপি লাভ করবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্থবির থাকা ঋণ কর্মসূচিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পাকিস্তান সরকার ১৭ হাজার কোটি রুপি রাজস্ব পেতে চাইছে এবং এ লক্ষ্যে ফাইন্যান্স সাপ্লিমেন্টারি অ্যাক্ট ২০২৩ কার্যকর করে শাহবাজ শরিফের সরকার।

সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জারি করা বিধানগুলো ১৯৯০ সালের বিক্রয় কর আইনের অষ্টম তফসিলে উল্লেখ করা পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে বুধবারের সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশে (এসআরও) বলা হয়েছে।

এর আগে গত মাসের শেষের দিকে আইএমএফ-এর শর্ত অনুযায়ী বিলাসী পণ্য আমদানিতে কর বৃদ্ধি করে পাকিস্তান সরকার। সে সময় পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বিল পাস করে ওই কর আরোপ করা হয়। তখন জানানো হয়, পাকিস্তানে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা রয়েছে, তা দিয়ে এক মাসের বেশি আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা যাবে না। এ পরিস্থিতিতে দেশটির সরকার খাদ্য ও ওষুধ ছাড়া বিভিন্ন বিলাসদ্রব্যের আমদানি সীমিত বা স্থগিত করেছে। এখন বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে পাকিস্তান আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য তাদের শর্ত না মেনে উপায় নেই। আইএমএফের শর্ত পূরণে আগামী ৪ মাসের মধ্যে ১৭ হাজার কোটি রুপি বাড়তি আদায় করতে চায় পাক সরকার, যদিও আইএমএফ দেশটিকে বছরে ৮৫ হাজার কোটি রুপি রাজস্ব আদায়ের শর্ত দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন সম্পূরক অর্থ বিল পাস করা হয়েছে।

মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে ইতোমধ্যে খাদ্য ও ওষুধ বাদে প্রায় সব ধরনের পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে পানি ও জুস, মিষ্টিজাতীয় পণ্য, যানবাহন, স্যানিটারি ও বাথরুমের সামগ্রী, চকোলেট, সিগারেট ও ই-সিগারেট, কর্ন ফ্লেক্স ও এ জাতীয় অন্যান্য পণ্য। আরও রয়েছে কার্পেট (আফগানিস্তান ছাড়া), ঝাড়বাতি ও আলোর সরঞ্জাম, খাদ্যশস্য, প্রসাধনী এবং শেভিং আইটেম, টিস্যু পেপার, ক্রোকারিজ, রান্নাঘরের জিনিসপত্র, টেবিলওয়্যার এবং গৃহস্থালির সামগ্রী, কুকুর ও বিড়ালের খাবার, দরজা ও জানালার ফ্রেম, মাছ, জুতা, ফল ও শুকনো ফল (যা স্থলপথ বা বিনিময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমদানি করা হয়), আসবাবপত্র প্রভৃতি। দেশটির আশা, কর বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাবে।

উল্লেখ্য, কয়েক বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং গত বছর ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হওয়ার পর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০