নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, এ প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন পেলে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন-২০১৭’-এর খসড়া চূড়ান্ত করতে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করেছি। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর আশা করছি আগামী শীতকালীন অধিবেশনে জাতীয় সংসদে এটি উত্থাপন করতে পারব।’
এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইন থেকে ৫৭ ধারা বাদ দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে এ বিষয়ে ‘বিভ্রান্তি’ দূর করা হবে। বুধবার ওই আইনের খসড়া নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার শুরুতে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আপনাদের যে উদ্বেগের ব্যাপার, সেটা হলো সেকশন ৫৭ আইসিটি অ্যাক্ট। আমার বিশ্বাস, এই ৫৭ ধারা সেভাবে থাকবে না এবং ফ্রিডম অব স্পিচ রক্ষা করার জন্য যেসব চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের দরকার, আমার মনে হয়, দুটো আইনেই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও সম্প্র্রচার আইনে প্রটেকশন থাকবে।’
আর সভা শেষে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল জগৎকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি এর প্রসার ও বিকাশে সাহায্য করাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের লক্ষ্য। সংবিধানে নাগরিকদের যে মৌলিক অধিকারের কথা বলা আছে, সংবিধানের যেসব গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি আছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন খসড়া মন্ত্রিপরিষদে পাঠাব। মন্ত্রিপরিষদ যদি আনুমোদন করে, তাহলে একই সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আপনারা পাবেন; একই সঙ্গে ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বিলুপ্ত হওয়ার প্রস্তাবও থাকবে।
সেক্ষেত্রে বিতর্কিত ওই ৫৭ ধারার বিষয়বস্তু কোনোভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে কি নাÑজানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মূলত ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলার জন্য করা হচ্ছে। সুতরাং ডিজিটাল অপরাধ মোকাবিলার বিষয়টি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ১৬ কোটি নাগরিকের জন্য করা হচ্ছে। সুতরাং এখানে সাংবাদিক বলে আলাদা কোনো বিষয়বস্তু নেই। সম্প্রচার আইন যখন পরবর্তীতে আসবে, সেখানে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের কর্মীদের ব্যবস্থা করা হবে। উল্লেখ্য, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী দাবি করে সেটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন সম্পাদক পরিষদসহ গণমাধ্যমকর্মীরা। ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারও মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা। ২০০৬ সালে হওয়া এ আইনটি ২০০৯ ও ২০১৩ সালে দুই দফা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধনে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ড করা হয়। আর ৫৭ ধারার অপরাধকে করা হয় জামিন অযোগ্য। এ ধারার ব্যবহার করে একাধিক গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ রয়েছে।