বিলেট নয়, ইংগটে ব্যবসায়ীদের ঝোঁক: আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি চান ব্যবসায়ীরা

 

নাজমুল হুসাইন: ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল বিলেট ও ইংগট। একই ধরনের হলেও ইংগটের তুলনায় কাঁচামাল হিসেবে বিলেট উৎকৃষ্ট। কিন্তু আমদানিকারকরা এখন ঝুঁকেছেন ইংগট আমদানিতে। এতে দেশে তৈরি ইস্পাতের মান কমছে। তাতে উৎপাদিত রডে বাড়ছে স্থাপনার ঝুঁকি। গত বাজেটের শুল্কায়ন বৈষম্য এই ইংগট আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণ বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইংগট আমদানিতে নতুন করে শুল্কায়ন চান তারা।

দেশেও ইস্পাতের কাঁচামাল তৈরি হয়। এ কারণে দেশি শিল্প সুরক্ষায় চলতি বাজেটে (২০১৬-১৭ অর্থবছর) বিলেট ও ইংগট আমদানি পর্যায়ে শুল্ক বৃদ্ধির দাবি ওঠে। তবে বাজেটে শুধু বিলেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো হয়, ইংগটে নয়। এতে আগের মতোই সাফটা চুক্তির আওতায় ভারত থেকে শূন্য শুল্কে ইংগট আমদানি করা যাচ্ছে। আর শুল্কছাড় অব্যাহত থাকায় ইংগটে ঝুঁকেছেন ব্যবসায়ীরা। উৎকৃষ্ট মানের পণ্য প্রস্তুতে বিলেটের প্রয়োজন হলেও এসেছে অনীহা। সব মিলিয়ে বাজেটের পর ভারত থেকে লাখ লাখ টন ইংগট দেশে এসেছে। এ অবস্থায় একদিকে নি¤œমানের ইংগটে তৈরি রডে যেমন ঝুঁকি বাড়ছে, তেমনি দেশি শিল্প সুরক্ষায় সরকারের বিলেটে শুল্কায়ন কোনো কাজে আসছে না।

এ বিষয়ে ইস্পাত শিল্পের সংগঠন বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস্ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ শেয়ার বিজকে বলেন, এ নিয়ে সরকারের কাছে আমরা একাধিকবার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গত বাজেটে শুধু বিলেটের আমদানিতে শুল্ক নির্ধারণ করায় ইস্পাত খাত তিন ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়েছে। এক. দেশে যারা ইস্পাতের কাঁচামাল তৈরি করছে, তারা আমদানির সেই অসম প্রতিযোগিতা থেকে বেরোতে পারছেন না। অন্যদিকে সমজাতীয় একপণ্যে শূন্যশুল্ক ও সাফটা চুক্তির সুবিধা থাকায় সরকার প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছে। সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে, বিলেটের বদলে নি¤œমানের ভারতের ইংগটে ভরে যাচ্ছে ইস্পাত খাত। এতে দেশে উৎপাদিত রডসহ বিভিন্ন পণ্যের মান ক্ষুণœ হচ্ছে। এতে স্থাপনার ঝুঁকি বাড়াছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বিলেট আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ২০ শতাংশ আরডি এবং ট্যারিফ ভ্যালু প্রতি টনে ৩৮০ ইউএস ডলার হিসেবে নির্ধারণ হচ্ছে। এতে বিলেট আমদানিতে শুল্ক বাবদ খরচ বেড়েছে ১২ হাজার টাকা। তবে ইংগটে শূন্য শুল্ক থাকায় বিলেট থেকে এই কাঁচামালের পার্থক্য অনেক বেড়েছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ভারত থেকে বর্তমানে যেসব ইংগট আসছে, তা বিলেটের তুলনায় অনেক কম মানসম্পন্ন। কারণ এসব ইংগট তৈরি হচ্ছে স্পঞ্জ আয়রন বা ওর থেকে। এতে অধিক মাত্রায় ফসফরাস ও সালফার থাকে। কিন্তু এসব উপাদানের মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। যার ফলে ইংগট থেকে প্রস্তুত ইস্পাত বা রডের শক্তিমাত্রা অনেক কম হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্কনীতি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি তথ্যের ভিত্তিতেও আমরা দেশে ইংগটের আমদানি বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করেছি

এবং সমজাতীয় পণ্য হিসেবে ব্যবসায়ীদের দাবিও যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। ফলে শিগগিরই ইংগট আমদানিতে বিলেটের মতো শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে, তিন বছর ধরে ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে ইস্পাতের বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি হয় ২৮ লাখ টন। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় সোয়া ৪৪ লাখ ২৮ হাজার টন। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি হয় প্রায় ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার টন।

এদিকে সঠিক তথ্য না থাকলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বাজেটে শুল্ক বৈষম্যের কারণে এর পর থেকে দেশে বেনাপোল বন্দর হয়ে প্রায় লক্ষাধিক টন ইংগট আমদানি হয়েছে। ফলে ঠিকভাবে সব কাঁচামালের আমদানি শুল্কায়ন হলে এই খাত থেকে প্রচুর রাজস্ব পাবে সরকার।

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০