নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) আর্থিকভাবে সচ্ছল নয়। কিন্তু নগরীকে সাজাতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। বর্তমানে গৃহকরের ওপর নির্ভর করে বিশাল অঙ্কের আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করতে হচ্ছে। চসিক নগরীতে যে সড়কগুলো নির্মাণ করছে, সেগুলো ধারণক্ষমতার অনেক কম। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২০ থেকে ৩০ টন পণ্যবোঝাই ট্রাক ও লরি চলাচলের কারণে এসব সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই বন্দর ব্যবহারকারী পরিবহন এবং কাস্টমের প্রতিটি বিল অব এন্ট্রি থেকে একটি নির্দিষ্ট হারে চার্জ আদায়ে মন্ত্রণালয়সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
গতকাল রোববার চসিকের সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এ ঘোষণা দেন।
এ সময় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে সারাদেশের উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন বলে চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। এ প্রকল্পগুলোর কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। প্রকল্পের মধ্যে কর্ণফুলী টানেল, মীরসরাই বিশেষ শিল্পাঞ্চল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, বে-টার্মিনাল হলে চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্ব যেমন বেড়ে যাবে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশিদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হাব। এ কারণে চট্টগ্রাম নগরীকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে চসিককে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে হবে।
মেয়র আরও বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন করার ক্ষেত্রে চউকের ওপর একক দায়িত্ব না রেখে চসিককেও দায়িত্ব দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, পরিচ্ছন্ন বিভাগকে ছয়টি জোনে ভাগ করা হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজের সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধনসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে উচ্ছেদকৃত অবৈধ দখলদাররা যাতে আবার উচ্ছেদকৃত জায়গা দখল করতে না পারে, সেখানে তিনি ফেন্সিং এবং বাগান করার নির্দেশনা দেন।
মেয়র দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পের টেন্ডার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করে শুকনো মৌসুমে নির্ধারিত সময়ে সড়ক উন্নয়ন কাজ করাসহ বরাইপাড়া খালের অগ্রগতি মাসিক প্রতিবেদন আকারে পেশ করার জন্য প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দেন। এছাড়া যান্ত্রিক শাখার গাড়িগুলো মাদারবাড়ী চসিকের গ্যারেজে রেখে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ মোহরা সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ফুটপাতের ওপর সীমনা দেয়াল নির্মাণ করায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অনতিবিলম্বে তা সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জাননো হয়। এছাড়া বিনা অনুমতি বা মেয়াদোত্তীর্ণ অনুমতিপত্র দ্বারা রাস্তা কর্তন করা হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ও ওয়াসার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে রাস্তা সম্প্রসারণের ফলে বিদ্যুতের পোল রাস্তার মাঝখানে থাকায় দুর্ঘটনাসহ জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি নিরসনে পরিদর্শনপূর্বক দ্রুত তা অপসারণের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরবৃন্দসহ চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম প্রমুখ।