নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ বিষয়ে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ নানা বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের সামনে এসব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
আইসিএমএবির সভাপতি উল্লেখ করেন, প্রস্তাবিত বাজেটে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে ছয় লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সমেত মোট দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিসহ বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে এ বিশাল বাজেট অর্জন সরকারের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। তবে অসম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আইসিএমএবি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রফেশনাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে সরকারের পাশে থেকে এ বাজেট অর্জনে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করতে চায়।
আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট প্রথমেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ধন্যবাদ জানান আইসিএমএবির প্রস্তাবানুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটে ‘ভ্যাট বিধিমালা ২০১৬’ মোতাবেক কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টদের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেয়ার জন্য। হিসাব ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার জন্য ফিন্যান্সিয়াল অডিটের পাশাপাশি কস্ট অডিট বাস্তবায়নের জন্য তিনি দাবি জানান, যা পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
একই সঙ্গে কস্ট অব গুডস সোল্ড স্টেটমেন্ট যদি কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টদের মাধ্যমে অডিট করা যায়, তবে কস্ট ইফিসিয়েন্সি বাড়বে, খরচ কমবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।
তিনি ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রতিটি বেঞ্চে একজন করে বিচারবিভাগীয় সদস্যের পাশাপাশি আইসিএমএবির সদস্য নিয়োগ দেয়ার বিধান চালু করার দাবি জানান। এতে বিচারাধীন আয়কর মামলার সংখ্যা কমবে। অ্যাডভাইজরি, কনসালটেন্সি প্রফেশনাল, টেকনিক্যাল প্রভৃতি সার্ভিস ফি থেকে উৎসে আয়কর কর্তনকে চ‚ড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করার দাবি জানান। সিনিয়র নাগরিক, যাদের আয়ের উৎস শুধু পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদ, তাদের রিটার্ন দেয়া থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য তিনি আবেদন জানান।
খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা, শিল্পায়ন, ব্যবসার প্রসার ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন, তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ সুবিধা প্রদান, পরিবহনশিল্প এবং বিমান পরিবহনশিল্পের জন্য তিনি বিশেষ সুবিধা প্রদানসহ এ খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন। কর কাঠামোয় স্টার্টআপ সেন্ড বক্স একটি ভালো উদ্যোগ। এখানে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অধিক সুযোগ দেয়া উচিত।
যাতায়াত খরচ সবার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য যাতায়াত ভাতায় করমুক্ত সীমা ৩০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা করা উচিত। বিনিয়োগের মাধ্যমে কর রেয়াত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের খাত বাড়ানো উচিত। শেয়ার মার্কেট সবাই বোঝেন না, তাই ডিপিএস সীমা ৬০ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকা করা উচিত।
শ্রম আইন অনুসারে প্রদানকৃত ডবিøউপিপিএফ খাতে খরচকে অননুমোদিত করা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান এই খাতে খরচ প্রদানে অনীহা প্রকাশ করবে।
ব্যক্তি খাতে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর্তনকৃত করকে চ‚ড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করা উচিত। কারণ এই খাতে আয়ের ওপর কর কর্তনের প্রমাণ সংগ্রহ করা অনেক সময়েই সম্ভব হয় না এবং কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়, মাঠপর্যায়ে করদাতাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
এ বছর মূসক আইনে অনেক বাস্তবমুখী এবং ব্যবসাবান্ধব করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তারপরও ব্যবসা সহজ এবং স্বচ্ছতা ও রাজস্ব বৃদ্ধির স্বার্থে কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টদের সম্পৃক্ত করা উচিত। উৎসে করকে হ্রাসকারী সমন্বয়ের জন্য পরবর্তী এক মেয়াদের পরিবর্তে তিন মেয়াদ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, সম্পূর্ণ অর্থবছর পর্যন্ত সমন্বয়ের সুযোগ থাকা উচিত, যেহেতু অর্থবছরের শেষে চ‚ড়ান্ত হিসাব করা হয়।
সঠিক ও স্বচ্ছ হিসাব ব্যবস্থা এবং রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য হিসাব বিবরণীতে কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট কর্তৃক প্রত্যয়িত কস্ট অব গুডস সোল্ড বিবরণী থাকা উচিত। ইনপুট আউটপুট কুইফিসিন্টের কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট কর্তৃক প্রত্যয়িত হলে সঠিক মূল্যের ওপর মূসক আদায় করা সম্ভব হবে। কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রত্যয়িত হলে সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যতীত নির্ধারিত পণ্যমূল্যের জন্য আবার অডিট প্রয়োজন হবে না। এ ধারাটি কিছু ক্ষেত্রে পাইলট প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে বাজেট বিষয়ে আরও বক্তব্য দেন সাফা উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি একেএম দেলোয়ার হোসেন, ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক একেএম কামরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ মো. আলী হায়দার চৌধুরী ও ঢাকা ব্রাঞ্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যানসহ অন্য কর্মকর্তারা।