নিজস্ব প্রতিবেদক: আগের ম্যাচগুলোয় হেরে সবার আগে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। তবু আশা বেঁধে রেখেছিলেন টাইগার সমর্থকরা। তাদের প্রত্যাশা ছিল শেষ ম্যাচটা অন্তত জয়ে রাঙাবে টিম টাইগাররা। কিন্তু সে আশাও মরীচিকায় পরিণত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে আট উইকেটে হেরে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করেছেন রিয়াদ মুশফিকরা।
গতকাল দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস ভাগ্যটাও সঙ্গে ছিল না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণের সামনে লজ্জায় ডোবালেন টাইগাররা। দল মাত্র ৭৩ রানে হলো অলআউট। তারপর ৬ ওভার ২ বলে কেবল ২ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া হেসে-খেলে তুলে নেয় পুরো ২ পয়েন্ট। ৮২ বল হাতে রেখেই পায় জয়।
আরেকটু হলে তো টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনি¤œ সংগ্রহের লজ্জায় পড়তে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। সেটা অবশ্য টপকালো। আগের সেই দুঃস্বপ্ন ৭০ রান এসেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই। সেটি ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আত্মাহুতির গল্পটা প্রায় একই রকম। উইকেটে এসেছেন আর ফেরত গেছেন সাজঘরে। মাঠে আসলে ঘরে ফেরার তাড়াটাও ছিল সবারই। ব্যর্থতার গল্প সমৃদ্ধ করে সেই লিটন দাস ফিরলেন কোনো রান না করেই। সৌম্য সরকার ৫ আর মুশফিকুর রহিম ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এরপর কেউ-ই আর উইকেটে থিতু হতে পারেননি।
কিছুটা সময় লড়েছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষের আগেই ওপেনার ধরেন সাজঘরের পথ। তার আগে করে আসেন ১৬ বলে ১৭। এরপর আফিফ হোসেনও অস্থির হয়ে ওঠেন ফেরার জন্য। তাকে যেন সেই সুযোগটা করে দিলেন অ্যাডাম জাম্পা। অজি এই স্পিনারের বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে কাটা পড়েন আফিফ, ০ রানে। টানা দুই ম্যাচে কোনো রান করা হলো না তার।
লড়তে চেয়েছিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তরুণ এ হার্ড হিটার ব্যাটসম্যানের। সেই অ্যাডাম জ্যাম্পার বল তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেট কিপারের গ্লাভসে। ১৮ বলে ১৯ রানে শেষ শামীম। বাংলাদেশ দল তখন ১০ ওভার ৫ বলে ৬ উইকেটে ৬২।
তখন অন্তত মনে হচ্ছিল পুরো ২০ ওভারে খেলে আসবে দল। কিন্তু পতনের মিছিল আর থামেনি। কিছুটা ফর্মে থাকা শেখ মেহেদি হাসান এবার আউট প্রথম বলেই। দল তখন মহা বিপর্যয়ে। তখন কিছু একটা করতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু হতাশার জš§ দিয়ে তিনিও হতে পারলেন না ত্রাণকর্তা। তাকে ফেরালেন মিচেল স্টার্ক। গ্ল্যান্স করতে গিয়ে বল তুলে দেন ম্যাথু ওয়েডের হাতে। ১৮ বলে ১৬ রান তুলে আউট রিয়াদ। অধিনায়কের বিদায়ে তখন দল ১২.২ ওভারে ৮ উইকেটে ৬৪ রান।
তারপর দলে ফেরা মুস্তাফিজুর রহমান আর শরিফুল ইসলাম কতটা কী আর করতে পারেন? স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা সর্বনাশ বাংলাদেশের। ৪ ওভারে ১৯ রানে ৫ উইকেট নেন জ্যাম্পা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার সেরা বোলিং ফিগার। আর লজ্জার ব্যাপার হলো ২০ ওভারের খেলায় ১৫ ওভারেই অলআউট বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে নিজেদের সবচেয়ে কম ওভার খেলার অনাকাক্সিক্ষত রেকর্ডও এটি। আগের ম্যাচে ৮৪ রানে অলআউটের পর এবার ৭৪।
যে উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান খাবি খেলেন, সেখানে দুই অজি ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার রান তুললেন অনায়াসে। একটা সাফল্য অবশ্য পেলেন তাসকিন আহমেদ। এ পেসার ফেরালেন ফিঞ্চকে। ২০ বলে ৪০ রান তুলে ততক্ষণে অজি অধিনায়ক দলকে নিয়ে যান জয়ের খুব কাছে।
এরপর ওয়ার্নারকে (১৪ বলে ১৮) সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন পেসার শরিফুল ইসলাম। বাকি কাজটুকু গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে (০) নিয়ে করে ফেলেন মিচেল মার্শ (৫ বলে ১৬)।
এ যাচ্ছেতাই ক্রিকেট আর দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ের স্মৃতি নিয়েই এবার ঘরে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। ২০ ওভারের বিশ্বকাপ লাল-সবুজের জন্য দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কী? এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও জয় মাত্র একটি। এবার ৫ ম্যাচে পাঁচটিতেই হার। আসছে বছর আরেকটি বিশ্বকাপ, জেগে উঠতে চাইলে পরের দিন সকাল থেকেই নতুন করে ভাবতে হবে ক্রিকেট কর্তাদের। সেই ভাবনার সময় কি তাদের হবে?