শেয়ার বিজ ডেস্ক: কাতারের পরিবহন মন্ত্রী জসিম বিন সাইফ আল সুলাইতি উল্লেখ করেছেন, তার মন্ত্রণালয় সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পরিবহন খাতের অগ্রগতিতে বিশাল টেকসই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছে ফিফা বিশ্বকাপ কাতার ২০২২ আয়োজন। এ আয়োজন ঘিরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছে তার মন্ত্রণালয় বলে জানিয়েছেন তিনি। খবর: দ্য পেনিনসুলা।
পরিবহন মন্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কাতার ন্যাশনাল ভিশন ২০৩০ লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার গতি তরান্বিত করতে কাতার ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজন বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ন্যাশনাল ভিশনের মধ্যে রয়েছে, সড়ক ও মহাসড়কের উন্নয়ন এবং এসব অবকাঠামোর স্থায়িত্ব বজায় রাখার জন্য প্রাথমিক নকশার উন্নয়ন। এর সঙ্গে রয়েছে, পরিবহন খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নৌ ও বিমানবন্দর তদারকি করা।
তিনি আরও যোগ করেন, তার মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে গণপরিবহনের (বাস) অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে ৮টি বাস স্টেশন এবং ৪টি ডিপোর উদ্বোধন রয়েছে। ১ হাজার ৭০০টির বেশি স্থানে বাস পার্কিং স্থান ছাড়াও ৪টি ‘পার্ক অ্যান্ড রাইড’ পার্কিং রয়েছে।
পরিবহন মন্ত্রীর দাবি, তাদের এ গণপরিবহন অবকাঠামো কর্মসূচি বিশ্বের অন্যতম পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি। পুরো পরিবহন খাতকে পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক এনার্জি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে।
মন্ত্রী উল্লেখ করেন, পরিবহন মন্ত্রণালয় পুরো দেশকে একটি সমন্বিত ও টেকসই পরিবহন নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে চায়, যেখানে পাবলিক ট্রানজিট বাস একটি অপরটির সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এতে আরও যুক্ত থাকবে দোহা মেট্রো ও লুসাইফ ট্রামস নেটওয়ার্ক, যা উন্নত অবকাঠামোর নিদর্শন। এতে সর্বাধুনিক আন্তর্জাতিক প্রযুক্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বোধন করা ‘সিলা অপারেশন সেন্টার’ ইঙ্গিত করে বলেন, এ সেন্টারের লক্ষ্য কাতারের সব গণপরিবহনকে একটি সমন্বিত নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, যাতে জনগণকে সবচেয়ে স্মার্ট পরিবহন সেবা দেয়া যায়।
নৌ পরিবহনের বিষয়ে তিনি বলেন, দোহা বন্দরের জন্য মন্ত্রণালয় পুনরায় উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ক্রজ শিপ খাতে এ অঞ্চলে নেতৃত্ব দেবে কাতার। এতে দেশের পর্যটন খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল খাত এবং বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আগেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের দিকে ইঙ্গিত করেছিলাম। এর মধ্যে রয়েছে, কাতারের আকাশসীমায় উড়োজাহাজ রুটের সংখ্যা বাড়ানো এবং আকাশপথে ব্যবহƒত ডিভাইস ও সিস্টেমের আধুনিকীকরণ, যাতে খেলা চলাকালে প্রত্যাশিত এয়ার ট্রাফিক সেবা দেয়া যায়।
মন্ত্রী সর্বশেষ আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানান, আরও আধুনিক ও সঠিক পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য দেশে অনেক আবহাওয়া কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে এবং বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন করা হয়েছে। তিনি মুকাইনিস আবহাওয়া কেন্দ্র উদ্বোধনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এ কেন্দ্রে দেশের প্রথম আবহাওয়া রাডার রয়েছে। কেন্দ্রটি সব বড় আয়োজনে সেবা দিয়ে থাকে, আসছে বিশ্বকাপেও সেবা দেবে।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগেসি’র সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে পরিবহন মন্ত্রণালয়। শুধু তা-ই নয়, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (আশঘাল), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মোয়াসালাত (কারওয়া) ও কাতার রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে পরিবহন মন্ত্রণালয়। বিশ্বকাপের সময় ও পরে ট্রাফিক জ্যাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে মন্ত্রণালয়।
আরব উপদ্বীপের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ কাতারে বিশ্বকাপ শিরোপার লড়াইয়ে ২০ নভেম্বর থেকে মাঠে নামবে ৩২টি দল। তবে দেশটিতে বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকে শুরু হয় সমালোচনা। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পাশাপাশি খেলার মাঠেও হয়েছে নানা ধরনের প্রতিবাদ। এলজিবিটি-বিরোধিতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে করা নিপীড়নমূলক আচরণসহ নানা বিষয় নিয়ে এখনও সমালোচনায় রয়েছে আয়োজক দেশ। এরপরও সবকিছু ছাপিয়ে ক্রীড়া জগতে অন্যতম সেরা সময় উপহার দিতে আগ্রহী কাতার।