জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকে অনেক পুরাতন নিদর্শন। এতে বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বস্তু সংরক্ষণ করা হয়। এসব নিদর্শন স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে জনসাধারণের সামনে প্রদর্শন করা হয়। অতীতকালে জাদুঘরগুলো গড়ে উঠত ধনীদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক উদ্যোগে। তখনকার দিনে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক জাদুঘর। সেসব জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকত শিল্পকর্ম, দুষ্প্রাপ্য ও আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক বস্তু। এখন সারা বিশ্বেই জাদুঘর দেখা যায়। তবে বিশ্বের নামকরা ও বড় জাদুঘরগুলোর অবস্থান উন্নত দেশগুলোয়। মানুষের জ্ঞানতৃষ্ণা ও বুদ্ধিবৃত্তিক নির্মাণের অগণিত চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে এসব জাদুঘরে। এমন কয়েকটি জাদুঘর নিয়ে দূরে কোথাও’র আজকের আয়োজন। জানাচ্ছেন শিপন আহমেদ
মাদাম তুসো জাদুঘর
মারি তুসো মোমের ভাস্কর্যশিল্পী হিসেবে পরিচিত। তার পুরো নাম আনা মারিয়া গ্রোশোলজ। বিয়ের পর তার নাম রাখা হয় মাদাম তুসো। আরও পরে মাদাম তুসো জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। মাদাম তুসো জাদুঘরের অবস্থান যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। এ জাদুঘরে বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমানদের মোমের মূর্তি তৈরি করে রাখা হয়। এরিস্টোটল থেকে স্টিফেন হকিং রয়েছেন এ জাদুঘরে। এ কারণে জাদুঘরটি বিখ্যাত পৃথিবীজুড়ে। তবে এর শুরুর একটা ইতিহাস রয়েছে। ফরাসি বিপ্লবের সময় নিজে এই সংগ্রহের সূচনা করেন। কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তার কাটা মাথাটি দিয়ে মোমের প্রতিকৃতি তৈরি করতেন তুসো। প্রথম ফরাসি রাজার কাটা মাথার প্রতিকৃতি দিয়ে শুরু হয় মাদাম তুসো জাদুঘরের পথচলা।
বিজ্ঞানী, খেলোয়াড়, গায়ক-গায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রীর মধ্যে রয়েছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ব্র্যাড পিট, জুলিয়া রবার্টস থেকে শুরু করে বলিউডের অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রাই, মাধুরী, ঋত্বিকসহ অনেকে। এমনকি কুখ্যাত খুনিদেরও মূর্তি রয়েছে। প্রতিটি মূর্তি এমন নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছেÑযেগুলো ঠিক মূর্তি মনে হয় না, মনে হয় জীবন্ত একেকটি মানুষ! বিশ্বের চার দেশের ১৮ শহরে মাদাম তুসো জাদুঘর বিস্তৃতি লাভ করেছে। বছরের ৩৬৫ দিনই জাদুঘরটি দর্শনার্থী ও পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে।
ব্রিটিশ মিউজিয়াম
হাজার বছরের ইতিহাস সংবলিত নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। লন্ডনের এ বিখ্যাত জাদুঘরটি মানব সভ্যতা ও ইতিহাসের এক অনন্য নিদর্শন। সংগ্রহের তালিকায় পৃথিবীর পুরো ইতিহাসটিই যেন রয়েছে এখানে। এটি নির্মাণ করা হয় ১৭৫৩ সালে। পদার্থবিজ্ঞানী স্যার হ্যান্স সেøায়নের সংগৃহীত জিনিসপত্রের ওপর ভিত্তি করে জাদুঘরটি গড়ে ওঠে। প্রথমে স্যার হ্যান্স ৭১ হাজারের বেশি বস্তুসামগ্রী সংগ্রহ করে জাদুঘরটিতে দান করেছিলেন। এর মধ্যে ৪০ হাজারের বেশি ছিল পুস্তক, সাত হাজার পাণ্ডুলিপি, ৩৩৭ প্রজাতির উদ্ভিদের দেহাবশেষসহ মিসর, গ্রিস, রোম, ভারত এবং আমেরিকা থেকে সংগৃহীত বস্তু ও প্রত্নসামগ্রী। জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য উš§ুক্ত করা হয় ১৭৫৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। বর্তমানে প্রায় ১৩ মিলিয়ন নিদর্শন এ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
হার্মিটেজ মিউজিয়াম
এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন জাদুঘর। ১৭৬৪ সালে ক্যাথলিন দ্য গ্রেট প্রতিষ্ঠা করেন হ্যার্মিটেজ মিউজিয়াম। এটি রাশিয়ার শিল্প-সংস্কৃতির এক অপরূপ সংগ্রহশালা। নেভা নদীর তীরে অবস্থান মিউজিয়ামটির। বিশ্বের জনপ্রিয় জাদুঘরগুলোর তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে এটি।
মিউজিয়ামে প্রবেশমুখে ১৯ দশমিক দুই টন ওজনের মার্বেল পাথরের কোলান ভাসি, প্রধান
সিঁড়ির দেয়াল ও সোনার তৈরি পাতের চোখ ধাঁধানো কারুকাজ রয়েছে। দ্বিতীয় নিকোলাসের স্ত্রী আলেকজান্ডার ফিওডিরোভানের ড্রয়িংরুমটিও সোনায় মোড়ানো। ট্রেসরি গ্যালারিতে রয়েছে সোনা ও হীরকখচিত নানারকম অলংকার। ফ্রান্স, স্পেন, ইতালির নবজাগরণে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রাফায়েল, জর্জনে, ভোরোনেজে ও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে এখানে। ১৫০০ ও ১৭০০ শতকের বিভিন্ন অস্ত্র এবং মুদ্রার সংগ্রহশালা রয়েছে এখানে। ১৯১৭ সালে বিপ্লবের পর রাশিয়ার বহু মূল্যবান সম্পদ এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। উইন্টার প্যালেস, পুরোনো-নতুন হার্মিটেজ ও হার্মিটেজ থিয়েটারসহ পাঁচটি বিল্ডিংয়ে সংরক্ষিত রয়েছে এসব নিদর্শন। দর্শনার্থীর জন্য উš§ুক্ত করে দেওয়া হয় ১৮৫২ সালে। ১২০ কক্ষে তা সংরক্ষিত আছে। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ এ জাদুঘরে আসে। ছয়তলাবিশিষ্ট বিশাল ভবনটিতে উইন্টার ভবন, ছোট আশ্রম, নতুন আশ্রম, প্রাচীন আশ্রম ও হার্মিটেজ নামের ভবনগুলো সবার জন্য উম্মুক্ত। এক সপ্তাহে পুরো হার্মিটেজ মিউজিয়াম দেখে শেষ করা সম্ভব নয়।