Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:19 am

বিশ্বখ্যাত কয়েকটি জাদুঘর

জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকে অনেক পুরোনো নিদর্শন। এতে বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বস্তু সংরক্ষণ করা হয়। এসব নিদর্শন স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে জনসাধারণের সামনে প্রদর্শন করা হয়। অতীতকালে জাদুঘরগুলো গড়ে উঠত ধনীদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক উদ্যোগে। তখনকার দিনে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক জাদুঘর। সেসব জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকত শিল্পকর্ম, দুষ্প্রাপ্য ও আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক বস্তু। এখন সারা বিশ্বেই জাদুঘর দেখা যায়। তবে বিশ্বের নামকরা ও বড় জাদুঘরগুলোর অবস্থান উন্নত দেশগুলোয়। মানুষের জ্ঞানতৃষ্ণা ও বুদ্ধিবৃত্তিক নির্মাণের অগণিত চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে এসব জাদুঘরে। এমন কয়েকটি জাদুঘর নিয়ে দূরে কোথাও’র আজকের আয়োজন। জানাচ্ছেন শিপন আহমেদ

প্রাদো মিউজিয়াম
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে এর অবস্থান। পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত জাদুঘর এটি। স্পেনের অনেক প্রাচীন নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে এই প্রাদো মিউজিয়ামে। দেশটির সেরা চিত্রকরদের আঁকা অনেক শিল্পকর্মও রয়েছে এ জাদুঘরে। বিখ্যাত ইউরোপিয়ান চিত্রকলার বিশাল এক সংগ্রহশালা বলা হয় প্রাদো মিউজিয়ামকে। বিখ্যাত চিত্রকর ভেলাজকুয়েজের ‘লাস মেনিয়াস’ চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে বিখ্যাত অনেক চিত্রকরের আঁকা ছবিতে সমৃদ্ধ জাদুঘরটি। ফলে এ জাদুঘরটির রয়েছে বিশ্বজোড়া খ্যাতি। এর প্রধান আকর্ষণ হলো রুবেনসের দ্য থ্রি গ্রেসেস। বিখ্যাত জুয়ান দে ভিলানুয়েভা জাদুঘরটি ডিজাইন করেন। ১৮১৯ সালে ফার্নান্দো জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করা হয়। এরপর এটা প্রাদো মিউজিয়ামে রূপ নেয়। এছাড়া স্পেন সভ্যতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন মিউজিয়ামটি ঘুরে।

ভ্যাটিকান মিউজিয়াম
ভ্যাটিকান সিটিতে এর অবস্থান। এটি মূলত খ্রিষ্টান ক্যাথলিকদের জন্য বানানো হলেও বর্তমানে সবার জন্য উম্মুক্ত। এটি কোনো জাতি-গোষ্ঠীর ইতিহাস তুলে ধরেনি, বরং এটি সমাজ ও সংস্কৃতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে বিভিন্ন দেশের মানচিত্র ও ধর্মীয় চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে মিসরীয় সভ্যতার শিল্পকর্মও এখানে গুরুত্ব পেয়েছে। এখানে সিসটাইন চ্যাপল ও র‌্যাফেলের জন্য আলাদা সংগ্রহশালা তৈরি করা হয়েছে, যা সব শ্রেণির দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। এখানে মোট ২২টি সংগ্রহশালা রয়েছে। বছরে প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী এই মিউজিয়ামে পরিদর্শনের জন্য আসে।

উফিজি গ্যালারি


উফিজি গ্যালারির অবস্থান ইতালির ফ্লোরেন্সে। জাদুঘরটিতে সংরক্ষিত রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় বস্তু। এটিকে বলা হয় রেনেসাঁ যুগের প্রথম চিত্রকর্মের সংগ্রহশালা। জাদুঘরের ভেতরে প্রবেশের শুরুতেই চোখে পড়বে বিখ্যাত ভাস্কর বোত্তিসেল্লির বার্থ অব ভেনাস ও ‘প্রিমাভেরা’সহ অন্যান্য নয়নাভিরাম ভাস্কর্য। আরও দেখতে পাবেন বিখ্যাত চিত্রকর মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো কালজয়ী সব চিত্রশিল্পীর আঁকা বিখ্যাত ছবিগুলো। পাথরের ওপর খোদাই করা সব মূর্তি আপনাকে অভিভূত করবে। যেন একেকটা মূর্তি একেকটা ইতিহাসের কথা বলছে।

ল্যুভর মিউজিয়াম


ল্যুভর মিউজিয়াম পৃথিবীর অন্যতম একটি বিখ্যাত মিউজিয়াম। প্রথম সারির জাদুঘরগুলোর মধ্যে একটি। জাদুঘরটির অবস্থান ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। আধুনিক ইউরোপের ইতিহাসের সংগ্রহশালা বলা হয় একে। জাদুঘরটির সামনে কাচের একটি পিরামিড রয়েছে। গ্রিক, মিসরীয়, রোমান ও প্রাচ্যদেশীয় অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে এ জাদুঘরে। এখানে আকর্ষণীয় বস্তুগুলো হলো রেনেসাঁ আমলের নিদর্শন, যা এটিকে আরও বহুমাত্রিকতা দান করেছে। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসাসহ রেম্বান্ট, রুবেন্স ও টশিয়ানের বিখ্যাত অনেক শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। এছাড়া আধুনিককালের বহু বিখ্যাত শিল্পী ও ভাস্করের শিল্প ও ভাস্কর্যকর্ম রয়েছে। প্রথমে ১৬২৪ সালে সম্রাট লুইয়ের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা হিসেবে ব্যবহƒত হত ল্যুবর মিউজিয়াম। পরবর্তী সময়ে ১৮৪৮ সালে তা ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত হয় এবং জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। বর্তমানে একে ছয়টি গ্যালারিতে ভাগ করে দর্শনার্থীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।