Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 8:46 pm

বিশ্বজুড়ে হুমকিতে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার

শেয়ার বিজ ডেস্ক: লেবাননে গত মঙ্গলবার ও বুধবার একযোগে হাজার হাজার পেজার (তারবিহীন যোগাযোগের যন্ত্র), ওয়াকিটকি, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যের বিস্ফোরণ ঘটে। বিশ্বজুড়ে এসব পণ্যের সরবরাহশৃঙ্খল–ব্যবস্থার নিরাপত্তা যাচাই এবং এ ব্যবস্থায় সরকার বা অন্য কোনো পক্ষের অবৈধ হস্তক্ষেপের ঝুঁকির বিষয়কেই সামনে তুলে এনেছে এ ঘটনা। খবর: আল জাজিরা।

লেবাননে দৃশ্যত যে হামলা হয়েছে, তা দেশটির সশস্ত্র হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি অভিযানের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। এটি নিত্যব্যবহার্য যোগাযোগের উপকরণ ভবিষ্যতে অস্ত্রে পরিণত হওয়ার শঙ্কাকে বাড়িয়ে তুলেছে।

প্রযুক্তিশিল্প ও পণ্য সরবরাহব্যবস্থা–বিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, লেবাননে ওই হামলা প্রযুক্তিপণ্য সরবরাহব্যবস্থার নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তাকে বিশেষভাবে মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই সঙ্গে তারা এ–ও ধারণা করছেন, এ ঘটনা প্রযুক্তিপণ্যের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থায় চিড় ধরাতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির মার্ককুলা সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড এথিক্সের প্রযুক্তি নৈতিকতা বিভাগের পরিচালক ব্রায়ান প্যাট্রিক গ্রিন বলেন, কাউকে না জানিয়ে হাজার হাজার যন্ত্র যেকোনো প্রকারে হোক, অস্ত্রে পরিণত হলো। এই বিস্ফোরক যন্ত্রগুলোর বিস্তৃতি কতটা, কীভাবে যন্ত্র বা যন্ত্র সরবরাহশৃঙ্খল–ব্যবস্থায় বিস্ফোরক ঢুকে পড়ল—এমন সব ভয়ানক প্রশ্নের উদয় হয়েছে ওই ঘটনায়; যা আগে কখনো বিবেচনা করা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল টেক ও কর্নেল ল স্কুলের ডিজিটাল অ্যান্ড ইনফরমেশন ল–এর অধ্যাপক জেমস গ্রিমেলম্যান বলেন, যন্ত্র নির্মাতা ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি এখন তাদের পণ্যের সরবরাহশৃঙ্খল–ব্যবস্থার শুদ্ধতার ব্যাপারে চিন্তায় পড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য এবং এর সরবরাহশৃঙ্খল–ব্যবস্থায় বাড়তি নিরাপত্তা ও যাচাই কার্যক্রম যুক্ত করার বিষয় বিবেচনা করতে পারে; যাতে এমন ঘটনা (লেবাননে বিস্ফোরণ) আরও ভালোভাবে শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা যায়।

পেজার ও ওয়াকিটকিগুলো ঠিক কীভাবে বিস্ফোরক যন্ত্রে পরিণত হলো, সেটি পরিষ্কার নয়; যদিও লেবানন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, যন্ত্রগুলোতে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। অবশ্য, ইসরায়েল ওই হামলার দায় স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটি করেনি।

বিকৃত করা যোগাযোগের যন্ত্র ব্যবহার করে আগেও গুপ্তহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল। বিস্ফোরকভর্তি মোবাইল ফোনের সাহায্যে ১৯৯৬ সালে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বোমা প্রস্তুতকারী ইয়াহিয়া আয়াশকে মেরে ফেলা ছিল ওই হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি। কিন্তু লেবানেন যেভাবে দুদিনে প্রযুক্তিপণ্যের যুগপৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল, তা একেবারে নজিরবিহীন। লেবাননে ওই বিস্ফোরণে অন্তত ৩২ জন নিহত ও ৩ হাজার ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে হিজবুল্লাহর সদস্যরা যেমন রয়েছেন, তেমন বেসামরিক লোকজনও রয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পণ্য সরবরাহশৃঙ্খল বিশেষজ্ঞ মিলাড হাঘানির প্রত্যাশা, লেবাননের ঘটনা বিশ্বের প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সরবরাহব্যবস্থার নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে সচেষ্ট করবে। হাঘানি বলেন, সাধারণভাবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এমন পরিস্থিতি নজিরবিহীন পর্যায়ের। অনেক প্রতিষ্ঠানই আগে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থাকে হয়তো এত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। আবার, অনেক প্রতিষ্ঠানের এমন হুমকি মোকাবিলা করার মতো হয়তো সক্ষমতাও নেই।

তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, অ্যাপল, স্যামসাং, হুয়াওয়ে, শাওমি ও এলজির মতো বিশ্বের প্রভাবশালী স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কম ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ হিসেবে নিজেদের তৈরি পণ্যের নিরাপত্তার প্রতি এসব বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের অধিকতর মনোযোগ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন তারা। এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধে অ্যাপল, স্যামসাং, হুয়াওয়ে, শাওমি ও এলজি তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি।

সার্বিক বিষয়ে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল ফর দ্য ফিউচার অব ইনোভেশন ইন সোসাইটির অধ্যাপক অ্যন্ড্রু মেনার্ড বলেন, বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী আতঙ্ক সৃষ্টি ও নিজেদের লক্ষ্য হাসিলে লেবাননের বিস্ফোরণকে একটা গ্রহণযোগ্য কৌশল হিসেবে বেছে নিতে পারে। তিনি বলেন, এটি এক নতুন ধরনের সন্ত্রাসী প্রচারণার দুয়ার খুলে দিয়েছে; যেখানে কারও পকেটে বা তার সন্তানের হাতে থাকা যন্ত্রই ধ্বংসের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।