বিশ্ববাজারে কমেছে জ্বালানি তেলের দাম

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডের আসন্ন মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের পর গতকাল সোমবার বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। যদিও আগের সেশনে দাম বাড়ে দুই শতাংশ। মূলত যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ায় জ্বালানি চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় তেলের দাম কমেছে। এর অন্যতম কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির তথ্য ও শোধনাগার রক্ষণাবেক্ষণজনিত বিষয়। এশিয়ায়ও একই ধরনের সমস্য রয়েছে। খবর: রয়টার্স, ব্লুমবার্গ।

গতকাল দিনের শুরুতে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৬ সেন্ট বা এক শতাংশ কমে ৮৫ দশমিক ৫৩ ডলারে নেমেছে। এর আগে শুক্রবার সেশনে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দুই দশমিক দুই শতাংশ বেড়েছিল।

এদিকে ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৯ সেন্ট বা এক দশমিক এক শতাংশ কমে ৭৮ দশমিক ৮৩ ডলারে দাঁড়ায়। যা আগের সেশনে দুই দশমিক এক শতাংশ বেড়েছিল।

এ বিষয়ে ওএএনডিএ’র জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মোয়া বলেন, জ্বালানির চাহিদা কমে গেলে, দাম কিছুটা সফট হয়। তিনি বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্য তথ্য প্রকাশ করবে দেশটির বাণিজ্য বিভাগ। এতে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি উঠে আসবে। এছাড়া ফেড আগামীতে সুদহার আর বাড়াতে চায়, যা মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির দিকে ঈঙ্গিত করছে। এ কারণে ভোক্তা তথ্য প্রকাশের আগের জ্বালানির চাহিদা কম দেখায় বিনিয়োগকারীরা, যা দাম হ্রাসের প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, এই সপ্তাহটি একটা ‘ব্রেক মোমেন্ট’ হিসেবে ধরা হবে। যেখানে বাজার ভালো যাবে নাকি আরও খারাপ যাবে তা নির্ভর করবে। 

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, এতে রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার আরও বাড়াতে পারে। যা জ্বালানি তেলের ওপর প্রভাব বাড়াবে।

এছাড়া সম্প্রতি তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং বহু ভবন ধ্বংস হওয়ায় বিমান চলাচল কমে গেছে, যা তেলের চাহিদা আরও দুর্বল করছে। অন্যদিকে গত রোববার থেকে নিউজিল্যান্ডের কয়েকটি রাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কয়েক শ’ ফ্লাইট বাতিল হয়। এতে তেলের চাহিদা কমে যায়। অন্যদিকে রাশিয়া তেলের উৎপাদন কমানোর ঘোষণায় গত শুক্রবার দাম বেড়ে যায়। এদিন রাশিয়া আগামী মার্চ থেকে দৈনিক ৫ শতাংশ উৎপাদন হ্রাস করার ঘোষণা দেয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়িয়েই যাচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও তেলের চাহিদা ধীর হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যালেকজান্ডার নোভাক জানিয়েছেন, মার্চে দৈনিক পাঁচ লাখ ব্যারেল তেল কম উৎপাদন করা হবে। সম্প্রতি রুশ তেল ও এ সম্পর্কিত পণ্যের ওপর পশ্চিমারা মূল্যসীমা বেঁধে দেয়। এরপরই তেলের দাম বেড়ে যায়। গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জ্বালানি তেলের বাজারে মন্দাভাব শুরু হয়। জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত শতাংশ হিসেবে গত ৬ মাসে বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ ও ডব্লিউটিআইয়ের দাম কমেছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।

চীনের সরকারি তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, গত জুন মাসে দেশটিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করায় জুলাইয়ে তা আবারও কমে যায়। এছাড়া চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অপ্রত্যাশিত ধীরগতির কারণে গত জুলাই মাসে দেশটিতে দৈনিক তেল পরিশোধনের পরিমাণও অনেক কমে যায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০