ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়ার প্রবণতা প্রাগৈতিহাসিক কালের। জীবনের ওপর আস্থা হারিয়ে মুক্তি পাবে, এ আশায়ই হতাশ মানুষ আত্মহত্যা করে। কষ্ট, বিপদ যত তীব্র হোক না কেন কোনো ধর্ম কিংবা সংস্কৃতি হত্যাকে বৈধতা দেয়নি, হোক না নিজের জীবন। যুগে যুগে আত্মহত্যা মানসিক অসুস্থতার সর্বশেষ পরিণতি হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। আধুনিক সভ্য সমাজেও আত্মহননের দৃষ্টান্ত কম নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে।
জীবন মানে টিকে থাকার যুদ্ধ। এ যুদ্ধে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই কেউ আত্মহত্যা করে। কভিডকালে মানুষের মধ্যে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে। নানা চাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে আত্মহননে প্রলুব্ধ হচ্ছে তারা। কভিডের সংক্রমণ শুরুর পর দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জীবনের উদ্দেশ্য পূরণ নিয়ে হতাশায় ভোগে শিক্ষার্থীরা। হতাশ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসে। এ ধরনের একটি সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি এক সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি বলছে, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০১টি।
শনিবার ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে আত্মহত্যা: হতাশায় নিমজ্জিত শিক্ষার্থীরা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিভিন্ন সময় জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রের তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনটি প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
শিশুকাল থেকেই সন্তানের মধ্যে পরিমিতিরোধ জাগ্রত করতে হবে। তুচ্ছ কারণে যেন হতাশ না হয়, সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। জীবনের সৌন্দর্য বোঝার মানসিকতা অর্জনে সহায়তা করতে হবে। কোন বয়সে সন্তানের কী প্রয়োজন, মা-বাবাকেও তা বুঝতে হবে। শিশুর আবদার রক্ষায় প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে। অনেক কিছু চাইবে সন্তান, তার কী পূরণ করতে হবে, পূরণ না করলে সন্তানের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে; বুঝতে হবে। বলা হয়ে থাকে, আত্মহত্যার প্রবণতা এক ধরনের মানসিক রোগ। এও সত্য, হঠাৎই কেউ আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেয় না। পুঞ্জীভূত ব্যর্থতাই আত্মহননে প্ররোচিত করে।
সন্তান অতিমাত্রায় বিষণœতায় ভুগছে কি না, বুদ্ধি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে কি না, তার অগোচরেই পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাই বলে চোখে চোখে রাখা যাবে না, অযাচিত খবরদারি করা যাবে না। তাকে বিশ্বাস করতে হবে। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার বৈরী আচরণ, মা-বাবার কলহ, সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ প্রভৃতি সন্তানের মনস্তত্ত্বে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আর্থসামাজিক অবস্থা, নির্যাতন, সম্ভ্রমহানি, অর্থনৈতিক অক্ষমতায় অতিমাত্রায় হতাশাগ্রস্ত ও সংবেদনশীল হয়ে আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছে। বিষণœতা যাতে তরুণ সমাজকে গ্রাস করতে না পারে, সে জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। বেঁচে থাকায়ই জীবনের পরিপূর্ণতাÑএ ধরনের প্রেরণাদায়ী গল্প, কবিতা পাঠ্যবইয়ে সংযোজন করতে হবে। আশা নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে। অথচ এখন আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক সামাজিক চাপ বেশি থাকে ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে তাদের মাঝে হতাশার ছাপ বেশি দেখা যায়। এ অবস্থায় আত্মহত্যা রোধে রাষ্ট্রকে বাস্তবানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে। সমন্বিতভাবে কাজ করা গেলে কিশোর-তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। তখন আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।