দেশে শিক্ষার্থীর তুলনায় উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আসনের সংখ্যা খুবই সীমত। এজন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষা দিতে হয়। তাই উচ্চ মাধ্যমিক দেয়ার পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে বিভিন্ন কোচিংয়ে ভর্তি হতে হয়। আমাদের দেশে প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৪ লাখ হয়ে থাকে। এবারও সব বোর্ড মিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব মিলিয়ে আসন সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ হাজার মাত্র। এই সীমত আসনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিজের জন্য একটি আসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছোটাছুটির যেন শেষ নেই।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কথা চিন্তা করে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার শিক্ষার্থীরা নিজ শহরে অবস্থান করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। শিক্ষকরা তাদের পছন্দমতো মেধাবী শিক্ষার্থী বেছে নেবেন। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় সেই সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হারাছে তাদের সক্রিয়তা। প্রশ্ন উঠতে পারে, মেডিকেল কলেজগুলো পারলে বিশ্ববিদ্যালয় কেন পারবে না? মেডিকেল কলেজগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা করা মোটেই সমীচীন নয়। সব মেডিকেল কলেজে একেই কোর্স পড়ানো হয়, তাই কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন বিষয় আছে। তাই ছাত্রদের পছন্দের ভিন্নতা রয়েছে। মেডিকেল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ার তুলনায় সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া একটু জটিল। এ জটিলতার কারণে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে একটা লম্বা সময় দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন সব জেলার শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্য ছিল, তাও হারাতে বসেছে। উত্তরবঙ্গের একজন অভিভাবক সন্তানকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে মোটেও রাজি হবেন না। আবার চট্টগ্রাম কিংবা কুমিল্লার কোনো বাবা তার সন্তানকে হাজী দানেশ কিংবা উত্তরবঙ্গের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চাইবে না।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রছাত্রীর ভোগান্তি কমানো। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন হয়নি, বরং ভোগান্তি, হয়রানি হাতশা, আর্থিক খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) গুচ্ছ পদ্ধতিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূর করা হোক নতুবা আগের মতো স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।
মো. সাইফুল মিয়া
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়