বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা

নারী শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় স্বশিক্ষিত করে গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে একটি শিক্ষিত জাতি গঠনের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনুমোদন পাওয়ার মাধ্যমে দেশে নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার উšে§াচিত হয়। তবে আক্ষেপের বিষয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এখনও তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি। আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয় নারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠেও নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তাহলে কোথায় আমরা নিরাপদ?

শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সুশিক্ষায় স্বশিক্ষিত হওয়া প্রত্যেক মানুষের জš§গত অধিকার। একবিংশ শতাব্দীতে এসে জ্ঞানপিপাসু নারীরা নিজেদের জ্ঞানভাণ্ডার পরিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ করার প্রবল স্পৃহা নিয়েই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে। তাদের নিরাপত্তার দিকে আলোকপাত করলে প্রথমেই উঠে আসে আবাসন সংকটের কথা। আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো সিনিয়র শিক্ষার্থীদের দখলে। এখানে স্নাতক প্রথম বর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের হলে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয় না। পক্ষান্তরে পাশ্চাত্য দেশগুলোয় প্রথম কয়েক বছরই আবাসন নিশ্চিত করা হয়। ফলে সেখানে তাদের আবাসনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ঘটনাটি সম্পূর্ণ বিপরীত। ফলস্বরূপ একজন নারী শিক্ষার্থীর স্বপ্নগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া সিট বাণিজ্য এবং হলে অবস্থানরত অবস্থায়ও নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের ন্যক্কারজনক সব ঘটনা পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে। সাম্প্রতিককালে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো নারী শিক্ষার্থীদের জন্য যে কতটা অনিরাপদ, তা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বর্বরোচিত ঘটনা থেকেই অনুমেয়। মুক্ত জ্ঞানচর্চার স্থানে এমন বর্বরোচিত ঘটনা কাম্য নয়।

ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশের এবং চলাচলের ব্যাপারেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে হবে। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা নারী শিক্ষার্থী যতটা ভোগান্তির শিকার হয়, তার চেয়েও অনেক বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় বহিরাগতদের জন্য। আবার ছিনতাই ও ধর্ষণের মতো অপকর্ম তো রয়েছেই। ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির চর্চা, প্রশাসনের গড়িমসি, প্রচলিত অনুশাসনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, নৈতিকতার অবক্ষয় প্রভৃতি কারণেই অপরাধীরা অনেক সময় পার পেয়ে যায়। ফলে ভুক্তভোগীরা প্রকাশ্যে আসতে চায় না এবং প্রতিবাদও করতে পারে না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সেগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ জায়গা থেকে নীতিনৈতিকতা, সচেতনতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করায় সোচ্চার হতে হবে। ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা ও পারিবারিক মূল্যবোধ শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই ক্যাম্পাস নারী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের অন্তরায় না হয়ে স্বপ্নছোঁয়ায় সহায়ক হবে।

সাবরীনা আফরিন মিম

শিক্ষার্থী

ফার্মেসি বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০