বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং বন্ধ হোক

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা সীমিত হবার কারণে অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছাড়া ভর্তি হবার আদৌ কোনো সুযোগ থাকে না। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সুযোগ পায়, তাদের পেছনের শিক্ষা জীবন যদি আমরা একটু ঘেটে দেখি তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এসএসসি, এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছে। এইসব অর্জন এমনি এমনি আসেনা। সেই প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ঐ সকল শিক্ষার্থীরা দিনরাত এক করে পড়ালেখা করেছে। পড়ালেখা করার জন্য অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাসায় কম যেত, আড্ডাবাজিতে থাকত না, এমনকি খেলাধুলাও কম করত কিংবা করত না।

বাবা মায়েরা আসলে কি চায়? তাদের সন্তান মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। যে সন্তান পড়ালেখায় মনোযোগী হয়, তারা কিন্তু বাবা-মায়ের খুব আদরের হয়, বড় ভাই-বোন থাকলে তারাও একটু বেশি আদর করে, আত্মীয়-স্বজন আলাদা চোখে দেখে, প্রতিবেশী চাচা-চাচিরা তাদের নিজেদের সন্তানদের কাছে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করায়। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কথা আলাদা করে বলার কিছু নাই। শিক্ষকদের আলাদা নজরে থাকে। অনেক আদর করে শ্রেণি কক্ষে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞেস করে। অর্থাৎ মেধাবী শিক্ষার্থীরা সবারই খুবই প্রিয় থাকে।

অনেকের আর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকতে পারে কিন্তু স্কুল কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই অন্যরকম একটা ভালোবাসার বলয়ের মধ্যেই বেড়ে ওঠে। লেখাপড়া থাকে তাদের ধ্যান-জ্ঞান। আর যারা সেটা ধরে রাখতে পারে, তারাই উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে মেধাবী সন্তানরা দিনরাত পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়, তারা যদি ক্যাম্পাসে এসে র‍্যাগিং এর নামে কারো দুর্ব্যবহারের শিকার হয়, তবে সেটা সত্যিই কষ্টের। এই শিক্ষার্থীরা তুই তাকারি শুনেও অভ্যস্ত না। খবরে দেখলাম, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শারিরীকভাবেও নাজেহাল করা হয়। এগুলো অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক কাজ।

বলা হয়ে থাকে, র‍্যাগিংয়ের মাধ্যমে নতুনদের সাথে সিনিয়ররা পরিচিত হয়। পরিচিত হতে হলে দুর্ব্যবহার করতে হবে, শারীরিক ভাবে নাজেহাল করতে হবে, এটা কেমন কথা?

শুধুমাত্র দুর্ব্যবহারের কারণেই আমার পরিচিত কয়েকজনকে দেখেছি ডিপ্রেশনে চলে গেছে। লেখাপড়া করতে পারেনি। জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারের কোর্স রিটেক নিয়েছে। আর প্রথমদিকে একবার সিজিপিএ নেমে গেলে, সেই সিজিপিএ পরে আর রিকভার করা যায় না। এরপর অনেকেই স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়।

অনেককে বলতে শুনেছি, সিনিয়রদের সাথে পরিচয় থাকলে চাকরি পেতে সুবিধা হবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এক বছর, দুই বছরের সিনিয়র কিভাবে চাকরি পেতে সাহায্য করবে? চাকরির বাজারে সেইতো সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী।

পরিচিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম থাকতে পারে। সেটা শিক্ষা সফর/কালচারাল প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জ/বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন ইত্যাদি বিভিন্নভাবে হতে পারে। যে র‍্যাগিং আমরা দেখছি, অবশ্যই সেটা ভালো কোন কিছু নয়। এই রাগিং বন্ধ হওয়া উচিত।

লেখক: রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০