আবদুল হাকিম আবির: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক বাজেট অনুমোদন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক ব্যয়ের কোনো তথ্য নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অনুমোদিত বার্ষিক বাজেট এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি যথাযথ বিধিবিধান মেনে করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে এক সভায় এমন দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরিকল্পনা কমিশনে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নের কাজ চলছে। সেখানে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয়ের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হিসাব সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো থাকার কথা থাকলেও সে অনুযায়ী নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল নিয়োগ, আর্থিক সুবিধা প্রদান ইত্যাদি বিষয় আর্থিক বিধিবিধান মেনে করা হচ্ছে কি না, তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয়ের নিরীক্ষা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা আনয়ন করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট প্রস্তাবনা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশের আলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অনুমোদন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক ব্যয়ের হিসাব মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয়ের নিরীক্ষা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা আনয়ন করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় সব কয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের বার্ষিক ব্যয়ের তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) নির্দিষ্ট সময়ে জমা দেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মঞ্জুরি কমিশনÑকারো কাছ থেকেই এ তথ্য সংগ্রহ করার কোনো প্রয়োজন মনে করে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয়ের তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে না থাকার কারণে আর্থিক খাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনিয়ম হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এতে সামগ্রিকভাবে দেশের শিক্ষা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া এর মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দূরত্ব ফুটে উঠে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবিদ ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়-ব্যয়ের তথ্যে বিভিন্ন সময়ে কিছু অসঙ্গতি উঠে এসেছে। এ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর সাংগঠনিক কাঠামোর দুর্বলতা ফুটে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক বাজেট ছাড়াও অন্যান্য আর্থিক সুবিধার বিষয়েও পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয়ের তথ্য ছাড়া অন্যান্য তথ্য যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে থাকে, তাই ব্যয়ের তথ্যও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে থাকা উচিত। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট ব্যবস্থাপনা আরও সুন্দর ও স্বচ্ছ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ বিষয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুসারে পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো গোপনীয়তা বা সীমাবদ্ধতা নেই। যে তথ্যগুলো মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন পড়ে, সে তথ্যই তারা নিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয়ের তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে না থাকার কারণে তাদের বাজেট ব্যবস্থাপনায় কোনো প্রভাব পড়ে না বলেও দাবি করেন তিনি।