জাবির হোসেইন: সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গবেষণা করেছে সাউথ অস্ট্রেলিয়া রাজ্যের রাজধানী অ্যাডেলেইডের ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন সিটি ম্যাগ। এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে তারা বিস্ময়কর কিছু তথ্য পেয়েছেন। প্রথমত, অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা দরকার। দ্বিতীয়ত, এর ঘাটতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমালোচনার শিকার হচ্ছে।
সিটি ম্যাগ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে। সমস্যা থেকে উতরানোর সমাধানও তারা খুঁজেছে। কিন্তু শর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। কেননা, খোদ অস্ট্রেলিয়া সরকারই এ খাতে বিনিয়োগ করে সরাসরি আর্থিক সুবিধা হাসিল করতে চায়।
তবে অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষামন্ত্রী সাইমন বার্মিংহাম বলেন, ‘টার্নবুল সরকার ইন্ডাস্ট্রি ও ইউনিভার্সিটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে গবেষণা কার্য পরিচালনা করতে চায়। এতে করে ডলারের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে। ন্যাশনাল ইনোভেশন ও বিজ্ঞান এজেন্ডার মাধ্যমে আমরা সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এর মধ্য দিয়েই গবেষণাকে সহায়তা করছি। আমরা কোনোভাবেই গবেষণাকে অবহেলা করছি না’।
জ্ঞানের সব শাখায় উন্নতমানের গবেষণা চালিয়ে যেতে চায় অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এসব গবেষণালব্ধ ফল থেকে উপকৃত হবে গোটাবিশ্ব। একটি উদ্ভাবনক্ষম, প্রগতিশীল ও টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অবদান রাখবে তাদের গবেষণা। এমনি মনে করে দেশটির উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতরা। অনেক ইউনিভার্সিটি সরকারের এ সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছে।
ফ্লিনডার ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর কলিন স্টারলিংকে পলিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি তার ইউনিভার্সিটিতে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবো। সেখানে আমাদের নতুন ভেঞ্চার ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে’।
এমন উদ্যোগের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে দেড়শোর মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে এ ব্যবস্থায় ইন্ডাস্ট্রির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠিত ইউনিভার্সিটিগুলোর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।
ড. গুইলাম ক্রাউচার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির উচ্চশিক্ষা বিষয়ক গবেষক, বিশ্লেষক ও পরামর্শদাতা। তার মতে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রির সহযোগিতায় এত নিমগ্ন থাকে যে নতুন কিছু উদ্ভাবনের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সংস্থার মতো টাকা উপার্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। শুধু আয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা ঠিক হচ্ছে না’।
বাণিজ্যিকীকরণকেও পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি ইউনিভার্সিটির মৌলিক গবেষণাও উপেক্ষা করা যাবে না। মৌলিক গবেষণা ব্যতীত উদ্ভাবন অসম্ভব। বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে হয়তো তাৎক্ষণিক লাভ করা সম্ভব কিন্তু গবেষণা ব্যতীত জাতি হিসেবে অনেক পিছিয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্ডাস্ট্রি নাকি ইউনিভার্সিটি কোনটা গ্রহণ করা হবে সে জটিলতায় না গিয়ে এ দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলা উচিত। দুয়ের মধ্যে সমন্বয় করা যেতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এর কোনো একটিকে বাদ দিয়ে চলা সহজ নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যিকীকরণ ও মৌলিক গবেষণায় আলোকপাত অস্ট্রেলিয়ায় ‘সিটি ম্যাগ’-এর গবেষণা

Add Comment