বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা না হওয়ার কারণ খুঁজুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি গবেষণা কেন্দ্রে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে গবেষণা না হওয়া-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। প্রতিবেদন থেকে এও জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক গবেষণা কেন্দ্রে কোনো ধরনের গবেষণাই হয়নি, যদিও সেগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গবেষণার নিমিত্তে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের পাঠদান ও গবেষণায় অনীহা নিয়ে দুর্নাম রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনোমতে শীর্ষ এক হাজারে থাকলেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অস্তিত্বই নেই র‌্যাকিংয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই যদি গবেষণার এমন অবস্থা হয় তাহলে অন্যগুলোয় কী অবস্থা, বলাই বাহুল্য।

শিক্ষকরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, তারা গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পান না। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগ যতটুকু বাজেট দেওয়া হয়, ততটুকু খরচ করতে পারে না। দুটি তথ্যই ঠিক। একদিকে যেসব শিক্ষক প্রতিনিয়ত গবেষণা করেন, তারা মৌলিক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পান না। অন্যদিকে অধিকাংশ শিক্ষক রুটিন অনুসারে ক্লাস করিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন, গবেষণার জন্য বরাদ্দ টাকা তারা খরচ করেন না বা করতে পারেন না। যদিও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত পড়ানোর আদর্শে তৈরি, গবেষণা সেখানে প্রধান দায়িত্ব নয়; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিবেচনায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় একাধারে জ্ঞান তৈরি ও বিতরণের ক্ষেত্র। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের দায়িত্ব পড়ানোর পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। শিক্ষক যদি গবেষণাই না করেন, তাহলে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হবে কীভাবে? সত্যিকার অর্থে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের মধ্যে গবেষণার তাড়না খুঁজে পাওয়া যায় না। পদোন্নতির জন্য যতটুকু না করলেই নয়, ততটুকুতেই তারা যেন সীমাবদ্ধ। ব্যতিক্রম আছেন অবশ্যই, কিন্তু তারা মূলধারার নন। গবেষণার জন্য অর্থ অবশ্যই বড় ফ্যাক্টর; কিন্তু সর্বাগ্রে প্রয়োজন সদিচ্ছা। শিক্ষকরা যদি সদিচ্ছা দেখানÑঅর্থ কোনো বাধা বলে আমরা মনে করি না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি কেন্দ্রে গবেষণা না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান জরুরি। যে কাজের জন্য ওই গবেষণা কেন্দ্রে শিক্ষকরা নিযুক্ত রয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের কাছে জবাবদিহি চাওয়া। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা কেন্দ্রের কী অবস্থা, তা দেখাও জরুরি। আমরা মনে করি, শিক্ষকরা যে দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন, তা তারা নিজ দায়িত্বেই পালন করবেন। তিয়াত্তরের অধ্যাদেশ দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা সেই স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখাবেন, এ আশা আমরা করতে চাই। পুরোনো চারটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়, তাহলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তাদের দেখে উৎসাহ পাবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে কী গবেষণা হচ্ছে, কতটুকু হচ্ছে এবং না হলে কেন হচ্ছে না, সেগুলোর কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০