ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল গতকাল বিকালে প্রকাশ করা হয়েছে। সকালে ফলাফল প্রকাশের কথা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দফতর থেকে সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে উপাচার্যের আদেশে ফল স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু পরীক্ষা শুরুর পরপরই প্রশ্ন ফাঁসের বিষয় জানার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়।
জানা যায়, ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর কিছু সময় পর হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ১৪টি ছবি সাংবাদিকদের হাতে আসে। সেই সূত্র ধরে জানা যায়, পরীক্ষা শুরুর ৪৩ মিনিট আগে এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র আসে। কিছু দুর্বৃত্ত প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার আগেই ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে এ কাজ করে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করা করেছে। আটক একজন পরীক্ষার আগেই ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে অপর একজনকে প্রশ্নপত্র পাঠান বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পাবলিক পরীক্ষা আইনেও মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলো। প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রমাণ হওয়ার পর সেই ফলে শিক্ষার্থীদের প্রতি কি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যায়? এভাবে ফল প্রকাশের মাধ্যমে ভর্তীচ্ছুদের মেধা কীসের ভিত্তিতে যাচাই করা হলো—প্রশ্ন থেকে যায়।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে কীভাবে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করা হলো? এটি ফাঁসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ কি জড়িত? কেউ জড়িত থাকলে তা বের করা হোক। হোতাদের খুঁজে বের না করে কোনো নাটক সাজালে তো হবে না। ছাত্রছাত্রীরা সারা বছর কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য; অথচ প্রশ্ন ফাঁস করে তাদের স্বপ্ন নষ্ট করে দেয় কিছু অসাধু ব্যক্তি। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
আগে থেকেই নাকি গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল যে, এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করা হবে এবং তা নিয়ে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এমন রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের গাফিলতি গ্রহণযোগ্য নয়।
বিদ্যালয় ও কলেজে দীর্ঘ ১২ বছর অধ্যয়ন শেষে ভর্তি পরীক্ষায় কৃতী শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে থাকে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারের সঙ্গে এর কুচর্চাও শুরু হয়েছে। ক’বছর ধরে প্রাথমিক থেকে চাকরিসহ সব ধরনের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড-খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন। সেজন্য তাদের চেষ্টারও কমতি নেই। ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। নয়তো বিশ্ববিদ্যালয়টি হারাবে তার দীর্ঘদিনের গৌরব। বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব অক্ষুণ্ন রাখার জন্য কর্তৃপক্ষকে যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।