প্রতিনিধি, খুলনা : বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আন্দোলন ছেড়ে হলে ফিরলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। ১০ দফা দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার পর তারা আন্দোলন স্থগিত করে হলে ফেরেন।
এর আগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে অপরাজিতা হলের ছাত্রীরা ভেতরের তালা ভেঙে বাইরে এসে গেট খুলে প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে অন্য হলের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হয়ে হাদী চত্বরে অবস্থান নিয়ে নিজেদের ১০ দফা দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের ১০ দাবি
১। রাইসকুকার ও রান্নার সরঞ্জামাদি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
২। যৌন হয়রানির প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলার কারণে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পারিবারিক শিক্ষা তুলে কথা বলায় ক্ষমা চাইতে হবে।
৩। হলে প্রয়োজনে অভিভাবক ও নারী আত্মীয়দের থাকার অনুমতি দিতে হবে।
৪। পানিতে পোকা ও খাবার সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
৫। প্রভোস্টদের নিজ ডিসিপ্লিনের স্টুডেন্টদের ডেকে ব্যক্তিগত এবং একাডেমিক বিষয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।
৬। হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৭। যে কোনো পরিস্থিতিতে সিট বাতিলের হুমকি দেয়া বন্ধ করতে হবে।
৮। যে কোনো পরিস্থিতিতে হলের ছাত্রীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৯। আজকের (মঙ্গলবার) ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দেয়া যাবে না।
১০। দাবি না মানলে প্রভোস্ট কমিটিকে পদত্যাগ করতে হবে।
অপরাজিতা হলের প্রভোস্ট রহিমা রিম্মি বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। তাদের সব দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ আমরা চাই না সন্তানরা কষ্ট পাক। তাদের হল তারা যেভাবে চাইবে, আমরা সেভাবে চালাব। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী কখনও প্রতিপক্ষ হতে পারে না।
এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, হলের প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্ট ছাত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ধমক দেয়া থেকে শুরু করে সিট বাতিলের হুমকি দেন। এসব নিয়ে মঙ্গলবার এক ছাত্রী ওই হলে বঁটি দিয়ে গলা কাটার চেষ্টা করলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেঁচে যান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রীদের রান্না করার সরঞ্জাম জব্দ করার নির্দেশ দেয় হল কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনায় বলা হয়, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, রাইসকুকার, হিটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম না সরালে যার রুমে এগুলো পাওয়া যাবে, তার সিট বাতিল হয়ে যাবে।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, কিছুদিন আগে ফেসবুকে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রীকে ৪৫ মিনিট ধরে ধমক দেয় এবং শাসায় হল কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া ছাত্রীরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জানালে সমস্যা সমাধান না করে উল্টো শাসানো হয়।
ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, সহকারী প্রভোস্ট ছাত্রীদের হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘হল তোমাদের সুযোগ, অধিকার নয়। যার সমস্যা সে হল থেকে নেমে যাও।’ এ কারণে মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন শুরু করেন তারা।