বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রদানের প্রস্তাবে টিআইবির উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিবিধ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সরকারকে আর্থিক সহায়তার নামে অনুদানের পরিবর্তে ঋণ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানায় সংস্থাটি। আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল কনসেশনাল ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (জিসিএফএফ) থেকে ঋণ গ্রহণ না করে সুদহীন অনুদান সংগ্রহের সর্বাত্মক ক‚টনৈতিক প্রয়াস অব্যাহত রাখতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে টিআইবি।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিবিধ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা প্রদানের প্রচেষ্টা করছে। এটা অনৈতিক, অগ্রহণযোগ্য ও উদ্বেগজনক। মানবিক বিপর্যয়ের সুযোগে সাহায্যের নামে বাংলাদেশের ওপর ঋণের বোঝা বৃদ্ধির এ উদ্যোগ বিশ্বব্যাংকের সুদ ব্যবসা সম্প্রসারেণের অংশ ছাড়া কিছুই না। এ ধরনের ঋণ গ্রহণ থেকে বিরত থেকে বিশ্বব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব আন্তর্জাতিক সূত্র থেকে সুদহীন আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে ক‚টনৈতিক প্রয়াস জোরদার করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে টিআইবি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে জাতিগত নিধনের লক্ষ্যে পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গা ‘শরণার্থীর’ অভূতপূর্ব বোঝা বাংলাদেশের একার নয়, বরং মিয়ানমার সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। ক্ষমতাধর আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর স্বার্থপ্রসূত দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনই মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে এ নৃশংসতার পথ অবলম্বনে উৎসাহিত করেছে। মিয়ানমারের এ হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ, বিশেষ করে সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, উন্নয়ন, বাণিজ্য ও সামরিক সহায়তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। বাংলাদেশের একার পক্ষে এ বোঝা বহন করার সামর্থ্য বা যুক্তি কোনোটাই নেই। এ দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই নিতে হবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ওপর এ ধরনের অতিরিক্ত ঋণের বোঝা চাপানো পাঁয়তারা বলেই মনে করে টিআইবি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তার অভিপ্রায় থাকলে এ বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়া উচিত। মিয়ানমারের অন্যতম দাতা সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে তার অবস্থানকে ব্যবহার করতে পারে।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিবিধ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তার বিষয়ে গত ১২ অক্টোবর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ও শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সাহায্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছে মর্মে ঘোষণা করে। বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মোট সহায়তার শুধু অর্ধেক অনুদান হিসেবে পাওয়ার সম্ভাবনার কথা সংবাদকর্মীদের জানান।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০