বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বিএনপি পাটকল বন্ধ করেছে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বৃহৎ পাটকল আদমজী জুটমিল বন্ধ করে দেয়। তারা ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পরই বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে একটি চুক্তি করে যে, পাটকলগুলো একে একে বন্ধ করে দেবে। ৯৩ সাল থেকেই বন্ধের কাজ শুরু হবে, বিনিময়ে তারা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে পাটকল শ্রমিকদের বিদায়ের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা পাবে।

গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পাট দিবস ও বহুমুখী পাটপণ্য মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গত ৬ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় পাট দিবস পালিত হয়। সে উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, বিএনপি যখন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এই চুক্তি করলো, তখন বিশ্বব্যাংক আবার ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। যে চুক্তি মোতাবেক বিশ্বব্যাংক ভারতকে টাকা দেবে নতুন পাটকল তৈরির জন্য।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যে চুক্তিটি করেছিল, তাতে আড়াই লাখ বেল পাট রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের চুক্তি মোতাবেক তাদের টাকায় ভারতে যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, তাতে আড়াই লাখ বেল পাট উৎপাদনে সক্ষমতা থাকবে।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজউদ্দিন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা করেন। এছাড়া বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পাট খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করেন। এছাড়া পাট বিষয়ে সারাদেশে আয়োজিত রচনা প্রতিযাগিতার বিজয়ীদের মাঝেও পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের উদ্যোগের ফলে আপনারা দেখেন পাটের সোনালি দিন আবার ফিরে এসেছে। পাট হচ্ছে একটি কৃষিপণ্য এর সঙ্গে আমার হাজার হাজার কৃষকের জীবন জড়িত এবং জমিতে পাট চাষ হয় তা প্রাকৃতিকভাবেই শস্যবর্তনের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। কাজেই আমাদের পাটের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।

পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর সরকার গঠনের পর আমরা বন্ধ থাকা বস্ত্র ও পাটকলগুলো চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমরা বন্ধ থাকা খুলনার খালিশপুর জুটমিল, সিরাজগঞ্জের কওমি জুটমিলসহ ৫টি পাটকল ও ২টি বস্ত্রকল চালু করেছি। এতে প্রায় ২১ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রফতানি আয় বেড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সে সময় থেকেই পাটপণ্য গবেষণায় গুরুত্ব প্রদান করে বলেই আজ পাট থেকে প্রায় ৩৫ রকম পণ্য উৎপাদন করা যাচ্ছে। এমনকি প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব পাটের পলিথিন ব্যাগও তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা।

অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের চাহিদা সৃষ্টিতে সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ এবং ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা ২০১৩’ কার্যকর করেছে। ইতোমধ্যে ১৭টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সংসদে পাট আইন অনুমোদন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরিকৃত প্রামাণ্যচিত্র ‘বাংলার পাটে বিশ্বমাত’ পরিবেশিত হয়। পরে পাটপণ্যের ফ্যাশন শো এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী এবং পাট পণ্যের মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০