শেয়ার বিজ ডেস্ক : বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে অঞ্চল হিসেবে টানা দুই বছর শীর্ষে থাকা দক্ষিণ এশিয়া এবার অবস্থান হারিয়েছে। প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষ অবস্থান দখল করেছে পূর্ব এশিয়া ও উপসাগরীয় অঞ্চল। আর দক্ষিণ এশিয়া নেমে এসেছে দ্বিতীয় অবস্থানে। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গ্রোথ আউট অব দ্য বø–’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
চলতি বছর এ অঞ্চলে ছয় দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে বিশ্বব্যাংক, যা গত বছর ছিল সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিতে এ শ্লথগতি স্বল্প অথবা দীর্ষ মেয়াদে এ অঞ্চলের জন্য চ্যালেঞ্জের কারণ হতে পরে। তবে নীতি ও সংস্কারের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির এ সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করলে ২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধি বেড়ে সাত দশমিক এক শতাংশ হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনের সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস (এসএইফ) অংশে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি পেছনে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোই দায়ী। এর মধ্যে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি হ্রাসের জন্য ভারতের ভ‚মিকাকেই বেশি দায়ী করা হয়েছে। সম্প্রতি ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের কারণে ভারতের অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় ভারতে নগদ অর্থের প্রবাহ কমে গেছে। নোট বাতিলের ফলে ভারতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের অর্থনীতির মতো নগদভিত্তিক খাতগুলো বড় আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া নতুন চালু হওয়া গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্সের (জিএসটি) নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি)। সব মিলিয়ে দেশটিতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া, আমদানি ও সরকারি খরচ বেড়ে যাওয়াকে প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির কারণ বলা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে ভারতে প্রবৃদ্ধি কমে সাত শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যেখানে গত বছর প্রবৃদ্ধি ছিল সাত দশমিক এক শতাংশ। তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনুযায়ী নীতি বাস্তবায়ন করলে আগামী বছর প্রবৃদ্ধি বেড়ে সাত দশমিক তিন শতাংশ হতে পারে দেশটির।
এ অঞ্চলের মধ্যে পাকিস্তান প্রবৃদ্ধির হার ধরে রেখেছে। দেশটি চলতি বছর পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যেখানে আগের বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল চার দশমিক পাঁচ শতাংশ। যদি বাণিজ্য ঘাটতি কমানো ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীতা ধরে রাখ যায়, তাহলে আগামী বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ২০১৫ সালের শক্তিশালী ভ‚মিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে চলতি বছর প্রবৃদ্ধি সহনীয় হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির শিল্প উৎপাদন বাড়ছে, রফতানি প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি এবং বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল রফতানি বাজার রয়েছে। সব মিলিয়ে সঠিক নীতি প্রণয়ন ও সংস্কারের মধ্যে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধির শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন জানান, এ অঞ্চলের কয়েকটি দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতির কারণ। তবে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা এবং দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতি বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।