দেশব্যাপী সড়কপথের ব্যাপক উন্নতি হওয়ার ফলে বিশ্বরোডগুলোর দুপাশে রেস্টুরেন্ট ও ফিলিং স্টেশনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে তিন থেকে ৫ ঘণ্টা কিংবা তার চেয়েও বেশি সময় লাগে এমন ভ্রমণগুলোয় খাবারের বিরতি দেয়া হয়। এ সময়ে যাত্রীরা খাবারের জন্য হোটেলে কিংবা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোয় ভিড় জমান। কিন্তু খাবারের দাম শুনে অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম হয়। হোটেলগুলোয় দুপুর কিংবা রাতের খাবারের দাম স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে দুই গুণ বেশি। এক প্লেট ভাতের দাম রাখা হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকা। এক পিস মুরগির মাংস দেড় থেকে ২০০ টাকা, ছোট ছোট চার-পাঁচ পিস গরুর মাংস ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। হোটেলের জনপ্রিয়তা কিংবা পরিবেশ বেঁধে দাম আরও বৃদ্ধি পায়। কেউ যদি ভাতের বদলে হালকা খাবার খাওয়ার জন্য ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোয় যায়, সেখানেও পণ্যের মোড়কে লেখা মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যে কিনতে হয় অর্থাৎ গায়ের মূল্য যাই থাকুক, বিক্রেতারা যে মূল্য নির্ধারণ করেছেন, সে মূল্যেই পণ্য কিনতে হবে, দরদাম করার সুযোগ নেই। অনেক যাত্রী দাম জিজ্ঞেস না করে খাবার খেয়ে খাবার শেষে দাম শুনে অবাক হয়ে যান। অস্বাভাবিক মূল্য পরিশোধ করতে বাধ্য হন কিংবা কেউ কেউ না খেয়ে অভুক্ত থেকেই গাড়ি ভ্রমণ শেষ করেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসায় একটা স্বাভাবিক নীতি হলো বিক্রি করব বেশি, লাভ করব কম, যাতে গ্রাহক বাড়ে এবং গ্রাহকদের আস্থা ও সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। বিশ্বরোডের হোটেলগুলোয় প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রীর আনাগোনা থাকায় পণ্যের মোড়কের মূল্যে বিক্রি করার পাশাপাশি বাজারের আট-দশটা হোটেলে যেভাবে খাবারের মূল্য রাখা হয়, সে মূল্যে বিক্রি করলেও যথেষ্ট লাভ থাকার কথা। কিন্তু হোটেল-দোকান মালিকরা ব্যবসা নয়, যেন কসাই হয়ে মানুষের পকেট কাটতে বসেছে। খেতে হলে খান, না খেলে হাত-মুখ ধুয়ে চলে যান। হোটেলে বিনা পয়সায় হাত-মুখ ধোয়ার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, এটাই যেন সবচেয়ে বড় কথা। কেউ যদি ভাত কিংবা নাশতা না করে শুধু এক কাপ চা কিংবা কফি খেতে চান, সেখানেও বিপত্তি। চাপ্রতি কাপ ২০ টাকা এবং কফিপ্রতি কাপ ৪০ টাকা রাখা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ সবখানে একই চিত্র।
যাত্রীদের কাছে চড়া মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রির এই রমরমা বাণিজ্যে গাড়ির ড্রাইভার-কন্ডাক্টররাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোন হোটেলে যাত্রাবিরতি দেবেÑসেটা নির্ধারণ করা হয় মূলত হোটেল মালিকরা ড্রাইভার-কন্ডাক্টরদের কেমন সুবিধা দেবে তার ওপর। জানা যায়, যাত্রীদের থেকে চড়া মূল্য রাখা হলেও ড্রাইভার-কন্ডাক্টরদের খাবার একদম ফ্রি। খাবার ছাড়াও বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেন ড্রাইভার-কন্ডাক্টররা। বিশ্বরোডকেন্দ্রিক হোটেল ব্যবসায়ীদের এ ধরনের অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীরা ফেসবুকে লিখে প্রতিবাদ করলেও ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ কিংবা অভিযোগ না জানানোর কারণে যাত্রীদের এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্বরোডের মতো জায়গায় কোম্পানিগুলো সহজেই দোকানে দোকানে নিজ দায়িত্বে পণ্য ডেলিভারি দেয়। পণ্য দোকানে আনতে ব্যবসায়ীদের বাড়তি খরচ গুনতে হয় না। এছাড়া ভাতের হোটেলের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আনতেও পরিবহন খরচ সীমিত। ব্যবসার পাশাপাশি যাত্রী সেবার মানসিকতা বজায় রাখলে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার মানসিকতা পরিহার করেও লাভবান হতে পারেন। কিন্তু তা না করে অধিক মুনাফার মানসিকতায় যাত্রীদের জিম্মি করছেন প্রতিনিয়ত। এ অবস্থায় বিশ্বরোডকেন্দ্রিক অধিক মুনাফালোভী মানসিকতার ব্যবসায়ীদের থেকে রেহাই পেতে যাত্রীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানানোর মাধ্যমে বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হবে। খাদ্য অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে বিশ্বরোডকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রুখতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে মোড়কজাত পণ্য কিংবা হোটেলের খাবারে স্বাভাবিক মূল্যের চেয়েও দ্বিগুণ মূল্য রাখার মতো বেআইনি ও অমানবিক কর্মকাণ্ড সবাই মিলে রুখতে হবে।
জুবায়ের আহমেদ
শিক্ষার্থী
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)
ঢাকা