Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:35 pm

বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নে আমরা নেই ভোটে আছি: চুন্নু

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করুক বা না করুক, জাতীয় পার্টি ‘ভোটে থাকবে’ বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনে আসছি নির্বাচন করার জন্য, চলে যাওয়ার জন্য নয়। কেউ যদি বিশ্বাস না করেন, সেটা তাদের বিষয়। আমরা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নে নেই।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হলো সরকার পরিবর্তনের পথ। এবারের ভোটে যেহেতু বিএনপি আসেনি, অ্যান্টি-আওয়ামী লীগ ভোট অনেক বেশি। সেই ভোট আমরা পাব। এটা আশা করে নির্বাচনে এসেছি। সেই ভোটটা পেতে গেলে সুপ্ত ভোটের পরিবেশ দরকার।’

সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে কি না, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকবে কি নাÑএসব নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সংশয় প্রকাশ করেছেন’ বলে যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে, তার প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব গতকাল মঙ্গলবার এ মন্তব্য করেন।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ভোট করেছিল অনেক নাটকীয়তার পর। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি, আর জাতীয় পার্টি ভোটে আসবে কি না, শুরুর দিকে তা অস্পষ্ট রেখেছিলেন দলটির নেতারা।

পরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করার এবং সব আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দেয়। তবে দলের প্রতিষ্ঠাতা এইচএম এরশাদের স্ত্রী, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং তার ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ নেতৃত্বের টানাপড়েনে ভোট থেকে সরে দাঁড়ান। তাদের বাদ দিয়েই প্রার্থী মনোনয়নসহ ভোটের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছেন এরশাদের ভাই, পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার কৌশল পাল্টেছে। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় কোনো আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেন দশম সংসদ নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় না পায়, সেজন্য দলের মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীরা দাঁড়িয়ে গেছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। তাদের বলা হচ্ছে ডামি প্রার্থী। কেবল বিএনপি নয়, জাতীয় পার্টিও শেষে আবার ভোট বর্জন করে কি না, সে বিষয়টিও আওয়ামী লীগকে মাথায় রাখতে হচ্ছে।

গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী তার সহকর্মীদের সঙ্গে স্বতন্ত্র ও প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনা করেন বলে খবর এসেছে কয়েকটি গণমাধ্যমে।

বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন মন্ত্রীর বরাতে সেসব খবরে বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কী করবে, সে বিষয়ে সন্দেহমুক্ত নন প্রধানমন্ত্রী। তার ভাষ্য, জাতীয় পার্টি রওশন এরশাদ, তার ছেলে সাদ এরশাদ এবং সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে নির্বাচন থেকে বাদ দিয়েছে; সুতরাং কেউ জানে না তারা কখন কী করবে।

মঙ্গলবার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চুন্নু। সেখানে সাংবাদিকরা তাকে প্রধানমন্ত্রীর ওই পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। আর আমাদের কেউ বিশ্বাস করবেন কি না, করেন কি না, সেটা তার বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের কোনো কমেন্টস নেই।’

এর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে জাতীয় পার্টি। সেখানে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছে দুই পক্ষই।

সে প্রসঙ্গ ধরে চুন্নু বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ইসি ও সরকারের কাছে শুধু ভোটের সুপ্ত পরিবেশ চেয়েছে। এটাই আমাদের মেইন দাবি, এটুকু হলেই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই।’

এক প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে এলাকায় কারও কাছে ভোট চাওয়া এবং জনসংযোগ-প্রচার করতে মানা করেছি। প্রার্থীরা এলাকায় আছে, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। সাংগঠনিক কাজকর্ম করে যাচ্ছে।’

আর রওশন এরশাদকে বাদ দিয়েই নির্বাচনে যাওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম আমাদের পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি নির্বাচন করুক, তার ছেলে করুক এবং তার (রওশন এরশাদ) ইচ্ছামতো আরেকজন করুক তিনজনের জন্য মনোনয়নপত্র নিয়ে আমরা অপেক্ষা করেছি। …নির্বাচনে যাবেন না। ম্যাডাম ভোটে এলে আমাদের জন্য ভালো হতো, কর্মীরাও খুশি হতো। ম্যাডাম না আসায় আমরা দুঃখিত।’

এদিকে মঙ্গলবারই গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন রওশন এরশাদ। সে বিষয়েও চুন্নুকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি যেতেই পারেন। যে কোনো মানুষের যাওয়ার সুযোগ আছে। রওশন এরশাদ সংসদের বিরোধী দলের নেতা। তিনি সংসদের নেতার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে যে কোনো সময়ে, যে কোনো বিষয়ে দেখা করতেই পারেন। রওশন এরশাদ গণভবনে যেতেই পারেন, এটা খুব ইজি বিষয়, আনকমন বিষয় নয়।’