ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন

বিশ্বের এক শতাংশের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বর্তমান বিশ্বের ১ শতাংশেরও বেশি মানুষ অর্থাৎ প্রতি ৯৭ জনে একজন বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত। এ কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের সুযোগও দিন দিন কমে আসছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি বিশ্বের সব দেশকে শরণার্থী এবং সংঘাত, নিপীড়ন বা অন্যান্য হুমকির কারণে উদ্বাস্তুদের নিরাপদ আশ্রয় ফিরে পেতে সাহায্য করার জন্য পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছে। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

বিশ্ব শরণার্থী দিবসের দু’দিন আগে প্রকাশিত ইউএনএইচসিআরের বার্ষিক গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯-এর শেষে সারা পৃথিবীতে ৭ কোটি ৯৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় ছিল। ইতিহাসে এর আগে এত মানুষ কখনও গৃহহারা ছিল না।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, শরণার্থীদের দুর্দশার দ্রুত সমাপ্তির আশাও দিন দিন কমে আসছে। নব্বইয়ের দশকে, প্রতি বছর গড়ে ১৫ লাখ মানুষ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরতে পারতেন। গত দশকে এই সংখ্যা কমে ৩ লাখ ৯০ হাজারে পৌঁছেছে, এতে বোঝা যায় বাস্তুচ্যুতির পরিমাণ এখন টেকসই সমাধানকে কত দূরে নিয়ে গেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘পরিবর্তিত বাস্তবতায় আজ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিমাণই যে শুধু বেড়েছে তা নয়; বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদি। নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের কিংবা নতুন কোথাও ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কোনো আশা ছাড়া এই মানুষগুলো বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে অনিশ্চয়তায়, এটা মেনে নেওয়া যায় না। শরণার্থীদের জন্য প্রয়োজন একেবারে নতুন ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি; এর সঙ্গে সঙ্গে তাদের দুর্ভোগের মূলে থাকা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা সংঘাতগুলোর সমাধানে চাই দৃঢ় প্রত্যয়।’

ইউএনএইচসিআরের গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ৭ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৫৭ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছে নিজ দেশের ভেতরে। বাকিরা বাধ্য হয়েছে দেশ ছাড়তে, যার মধ্যে ২ কোটি ৯৬ লাখ শরণার্থী, আর ৪২ লাখ মানুষ অন্য কোনো দেশে আশ্রয়ের আবেদন করে ফলাফলের অপেক্ষা করছে।

২০১৮-এর শেষে এই সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৮ লাখ, যা এক বছরে বেড়েছে মূলত দুটি কারণে। প্রথমটি হলো নতুন বাস্তুচ্যুতির বিভিন্ন ঘটনা। বিশেষত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল, ইয়েমেন ও সিরিয়ার সংঘাত। সংঘাতপূর্ণ নয় বছর পর আজ ১ কোটি ৩২ লাখ সিরিয়ান হয় শরণার্থী কিংবা আশ্রয়প্রার্থী অথবা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। এই সংখ্যা বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতির ছয় ভাগের এক ভাগ।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে আছে নিজ দেশের বাইরে অবস্থানরত ভেনেজুয়েলার মানুষের পরিস্থিতি সম্পর্কে গত এক বছরে পাওয়া বিশদ তথ্য। তাদের অনেকেই আইনত শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত নন, কিন্তু সুরক্ষা ও সহায়তা তাদেরও প্রয়োজন।

এগুলো শুধুই সংখ্যা নয়, এর মধ্যে জড়িয়ে আছে অনেক মানুষ ও তাদের দৈনন্দিন সংগ্রাম। অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও মঙ্গোলিয়ার মোট জনসংখ্যার যোগফলের চেয়েও বেশিসংখ্যক শিশু আজ বাস্তুচ্যুত। তাদের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ, যার মধ্যে লাখ লাখ শিশু অভিভাবকহীন। বাস্তুচ্যুত প্রবীণ জনসংখ্যা (৪ শতাংশ) বৈশ্বিক প্রবীণ জনসংখ্যার (১২ শতাংশ) চেয়ে অনেক কম। এই পরিসংখ্যানের পেছনে আছে অসংখ্য হƒদয়বিদারক হতাশা, আত্মত্যাগ ও বিচ্ছেদের কাহিনি।

বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ব্যাপারে এই ৮টি বিষয় জানা দরকার। এক. ১০ কোটি মানুষ গত এক দশকে বাস্তুচ্যুত হয়ে নিজ দেশের অন্যত্র অথবা দেশের বাইরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এই সংখ্যা মিসরের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি, যা কি না বিশ্বের ১৪তম বৃহৎ জনসংখ্যা। দুই. বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিমাণ গত দশ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে (২০১০-এ ছিল ৪ কোটি ১০ লাখ, যা এখন ৭ কোটি ৯৫ লাখ)। তিন. ৮০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত মানুষ এমন দেশে আছে, যেসব দেশ তীব্র খাদ্য সংকট ও অপুষ্টি সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে অনেক দেশ জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। চার. বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি শরণার্থী (৭৭ শতাংশ) দীর্ঘমেয়াদি সংকটে আটকে আছে। উদাহরণস্বরূপ : আফগানিস্তান সংকটের এখন পঞ্চম দশক চলছে। পাঁচ. প্রতি ১০ জনে গড়ে আটজনেরও বেশি (৮৫ শতাংশ) শরণার্থী এখন আছে উন্নয়নশীল দেশে, সাধারণত প্রতিবেশী দেশেই তারা আশ্রয় নেন। ছয়. বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের দুই-তৃতীয়াংশ পাঁচটি দেশ থেকেÑসিরিয়া, ভেনেজুয়েলা, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান ও মিয়ানমার।

সাত. প্রধান সব বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থীদের এই গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্টে গণ্য করা হয়েছে; এর মধ্যে আছে ৫৬ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী, যাদের সেবায় নিয়োজিত আছে ইউনাইটেড ন্যাশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন। আট. জাতিসংঘের স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশন এ বছরের মার্চে শরণার্থীবিষয়ক একটি নতুন সূচক যোগ করেছে। এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়নের ‘লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড’ অঙ্গীকারে শরণার্থীরাও যুক্ত হয়েছে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০